রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক ভবন থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
Published : 09 Sep 2016, 06:06 PM
ওই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জুবেরী ভবনে আকতার জাহানের কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে তার লাশ পাওয়া যায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
সহযোগী অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আকতার জাহানকে তার ঘরে মশারির ভেতরে শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। তার মুখে ফেনা ও রক্ত বেরিয়ে আসার মতো কালো দাগ ছিল।
তবে ময়নাতদন্ত না করে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় বলে রাজশাহী মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মহিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তাকে আমাদের কাছে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়। দেখে মনে হচ্ছে, দুই-একদিন আগেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৯৭ সালে শিক্ষক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন আকতার জাহান।
চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেই তানভীর আহমেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, যিনি বর্তমানে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। কয়েক বছর আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে দুজনের সহকর্মীরা জানান।
সহকর্মীরা জানান, তানভীরের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে ২০১২ সালে জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন আকতার জাহান। স্কুলপড়ুয়া ছেলে তখন বাবার সঙ্গে থাকলেও মাঝেমাঝে মায়ের কাছে আসত। এরমধ্যে গত বছরের শেষ দিকে তানভীর আবার বিয়ে করেন। এরপর চলতি বছরের শুরুতে ছেলেকে ঢাকায় তার নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন আকতার জাহান।
তার সহকর্মী প্রভাষক মামুন আবদুল কাইউম জানান, গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ায় তাদের ধারণা ছিল আকতার জাহান ঢাকায় তার বাবার বাড়িতে গেছেন।
কিন্তু তার ছেলে শুক্রবার কয়েকজন শিক্ষককে ফোন করে জানায়, সে তার মাকে ফোনে পাচ্ছে না। এরপর শিক্ষকরাও ফোন করে না পেয়ে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানায়।
সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবাই মিলে জুবেরী ভবনে গিয়ে তার ঘরের দরজায় নক করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে পুলিশ এলে দরজা ভেঙে তাকে ওই কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় বের করা হয়।”
মামুন কাইউম বলেন, “ম্যাডামের ঘরে তখনো মশারি টাঙানো ছিল, ফ্যানও চলছিল।”
সহকর্মীরা জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় মোবাইলে আকতার জাহানের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল বলে তার ছেলে তাদের জানিয়েছেন।
সাবেক একজন সহপাঠী জানান, আকতার জাহানের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তিনি ঢাকায় থাকেন। গত কয়েক মাস ধরে ঢাকায় থেকেই একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়ছে আকতার জাহানের ছেলে।
মতিহার থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, আকতার জাহানের মৃতদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
ঢাকা থেকে পরিবারের সদস্যরা রাজশাহী পৌঁছালে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিভাগের শিক্ষকরা জানিয়েছেন।