মীর কাসেমের ফাঁসি কোথায়?

এর আগে পাঁচজন যুদ্ধাপরাধীর মৃত‌্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এবং সবার ক্ষেত্রেই তা হয় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

লিটন হায়দার জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 04:17 PM
Updated : 30 August 2016, 05:12 PM

২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লা থেকে শুরু করে দণ্ডিত সবাইকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে এনে নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারের কাঁসিকাষ্ঠে নেওয়া হয়েছিল।  

বহু পুরনো সেই কারাগার সম্প্রতি সরে গেছে রাজধানীর উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জে, আর এর মধ‌্যেই আরেক যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আইনি লড়াইয়ের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।

মৃত‌্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া এখন শুরু করতে বাধা নেই বলে মঙ্গলবার আপিল বিভাগের রায়ের পরপরই জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।   

সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেমের মৃত‌্যুদণ্ড কার্যকর কি কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে, না কি কাশিমপুর কারাগারে হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মধ্যে।

উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত‌্যুদণ্ড কোথায় কার্যকর করা হবে, সরকারের সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

মীর কাসেম আলী

তবে উভয় কারাগারের কর্মকর্তারাই বলছেন, সিদ্ধান্ত যাই হোক, তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

নাজিমউদ্দিন সড়কে কারাগার না থাকায় কেরানীগঞ্জে হোক আর কাশিমপুরে হোক, দুটি ক্ষেত্রেই মীর কাসেম হবেন প্রথম যুদ্ধাপরাধী, যার কারাদণ্ড নতুন কোনো কারাগারে হচ্ছে।

ষাটোর্ধ্ব মীর কাসেম এখন রয়েছেন সুরক্ষিত কাশিমপুর কারাগারে।

মৃত‌্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে তার আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে একাত্তরে নির্মমতার জন‌্য চট্টগ্রামে ‘বাঙালি খান’ হিসেবে কুখ‌্যাত মীর কাসেমের।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মৃত‌্যুদণ্ডে দণ্ডিত যে কাউকে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষা দিতে পারলেও দুই যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রে সেই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেননি রাষ্ট্রপ্রধান। আর দণ্ডিত বাকি তিনজন প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি।

মঙ্গলবার রিভিউ খারিজের রায় কাশিমপুর কারাগারে বসে শোনার পর এখন মীর কাসেমকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করবেন কি না?

কাশিমপুর কারাগার

তবে কাশিমপুর কারাগারের কারা কর্মকর্তারা ইতোমধ‌্যে তাদের ফাঁসিকাষ্ঠে দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

রিভিউ রায় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছার পর কাশিমপুরের কারারক্ষক নাসির উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাঁসি কার্যকর করতে যা করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলার পর বাকি কাজ সারব।”

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ‌্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আগের পাঁচটি দণ্ড কার্যকরে তদারকির ভূমিকা ছিল জাহাঙ্গীর কবিরের, তবে এখন তার কারাগারই চলে গেছে কেরানীগঞ্জে।  

জাহাঙ্গীর কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি তাদেরও রয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তারা।

কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগার

কেরানীগঞ্জের ফাঁসিকাষ্ঠ

আগের অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, আগের সব যুদ্ধাপরাধীর মৃত‌্যুদণ্ড কার্যকরের বেশ আগেই তাদের নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে নেওয়া হয়েছিল।

কোন কারাগারে হবে দণ্ড কার্যকর- জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেননি।

রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইলে কল করা হলে তা ধরে তার সহকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মন্ত্রী এখন ‘মিটিংয়ে’ রয়েছেন বলে কথা বলতে পারছেন না।  

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে।

তার দুই বছর পর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।

এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একই দিনে, গতবছরের ২১ নভেম্বর।

সর্বশেষ জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের ছয় দিনের মাথায় গত ১১ মে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।