জরিমানা দিতেই হচ্ছে শ্যামপুর-কদমতলীর ১০ কারখানাকে

বুড়িগঙ্গা নদী দূষণের অভিযোগে শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প এলাকার ১০টি কারখানাকে পরিবেশ অধিদপ্তরের করা জরিমানা পরিশোধ করতেই হচ্ছে।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 01:22 PM
Updated : 29 August 2016, 01:22 PM

ওই জরিমানা আদায়ের ওপর হাই কোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, তা প্রত্যাহার করেছে আপিল বিভাগ।

এক রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।

রিটকারীর আইনজীবী বলেছেন, এ আদেশের ফলে কারখানাগুলোকে এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশ অনুসারে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অন‌্যদিকে শিল্প কারখানাগুলোর আইনজীবী বলেছেন, তারা আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে রিভিউ আবেদন করবেন। 

রিট আবেদনকারী হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ছারওয়ার আহাম্মেদ।

ওই এলাকার শিল্প কারখানাগুলো পরিবেশ দূষণ করছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১৫ সালের শুরুতে এই রিট আবেদন করে।

গত ২৫ জানুয়ারি হাই কোর্ট এ বিষয়ে রুল দিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেয়। তারপর পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিম ১০টি কারখানা অভিযান চালায়।

কারখানাগুলো হচ্ছে- সীবা ডায়িং লিমিটেড, ইভানা ডায়িং মিলস, রানা এন্টারপ্রাইজ, এসএস ডায়িং মিলস লিমিটেড, চাঁদনী টেক্সটাইল লিমিটেড, সুগন্ধা ডায়িং লিমিডেট, নূর এ মদিনা ডায়িং লিমিটেড, কুমিল্লা ডায়িং, সোনারগাঁও ফ্যান্সি প্রিন্টিং অ্যান্ড ডায়িং এবং মিতা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ।

পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই এবং ইটিপি নির্মাণ না করে দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশে বলা হয়, এর ফলে কারখানার বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গায় পড়ে নদীর জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানকে ইটিপি নির্মাণ করতে বলার পাশাপাশি সীবাকে এককালীন ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৪ টাকা এবং মাসিক ৫০ হাজার টাকা, ইভানাকে এককালীন ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬০ টাকা এবং মাসিক ৩০ হাজার টাকা, রানা এন্টারপ্রাইজকে এককালীন ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭২০ টাকা এবং মাসিক ৪০ হাজার টাকা, এসএস ডায়িং মিলসকে এককালীন ৫ লাখ ৪ হাজার টাকা এবং মাসিক ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এছাড়া চাঁদনী টেক্সটাইলকে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং মাসিক ৬০ হাজার টাকা, সুগন্ধা ডায়িংকে এককালীন ৭ লাখ ৮৬ হাজার এবং মাসিক ৪০হাজার টাকা, নূর এ মদিনা ডায়িংকে ৩ লাখ ৯৯হাজার ৩৬০ টাকা এবং মাসিক ৩০ হাজার টাকা, কুমিল্লা ডায়িংকে ৯লাখ ৯৮ হাজার ৫২৮ টাকা এবং মাসিক ৫০হাজার টাকা, সোনারগাঁও ফ্যান্সি প্রিন্টিং অ্যান্ড ডায়িংকে ৪ লাখ ৯৯হাজার ২শত টাকা এবং মাসিক ৩০হাজার টাকা এবং মিতা টেক্সটাইল মিলসকে এককালীন ৯লাখ ৯৮ হাজার ৪৪০ টাকা এবং মাসিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে আয়শা ডায়িং নামে শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প এলাকার একটি কারখানায় ২৫ মে অভিযান চালিয়ে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে ডিসেম্বর পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে বলে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরদিন ২৬ মে অভিযান চালিয়ে জেদ্দা ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, বাহার ডায়িং লিমিটেড, ফুঁজি টেক্সটাইল প্রসেসিং লিমিডেটের প্রতিনিধিকে ৬ জুলাই তলব করে অধিদপ্তর।

পরে শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে একটি আবেদন করা হলে হাই কোর্ট কারখানা বন্ধ ও জরিমানার আদেশ স্থগিত করে। সেখানে ‘কমন ইটিপি’ নির্মাণ এগিয়ে চলছে যুক্তি দেখানোর পর ওই আদেশ আসে।

পরে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রিটকারী সংগঠন। সোমবার আপিল বিভাগ রিটকারীর আবেদন নিষ্পত্তি করে স্থগিতাদেশ তুলে নেয়।

মনজিল মোরসেদ বলেন, “এখন তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশ অনুসারে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যতদিন দূষণ চলবে, ততদিন মাসিক হারে জরিমানার অর্থ দূষণকারী কারখানাগুলোকে দিয়ে যেতে হবে।”

অন‌্যদিকে কারখানাগুলোর আইনজীবী ছারওয়ার আহাম্মেদ বলেন, “আপিল বিভাগের আদেশের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানার বিষয়টা কার্যকারিতায় আসলো। তবে এখনই জরিমানা দেওয়া লাগবে না। কারণ রায়ের পূর্ণ অনুলিপি পেলে আমরা রিভিউ করব।

“সেখানে সরকারের উদ্যোগে কমন ইটিপি হচ্ছে। সেজন‌্য জমি দিতে ওয়াসা সম্মত হয়েছে। সুতরাং এ পর্যায়ে জরিমানা চলে না দেখিয়ে আমরা রিভিউ করব।”