ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের ধর্ষণসহ নির্যাতনের ঘটনাগুলোতে ৭৮ শতাংশে বাঙালিরা দায়ী থাকে একটি মানবাধিকার সংগঠন দাবি করেছে।
Published : 23 Mar 2016, 10:30 PM
২০১৫ সালের ‘আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নিয়ে কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়।
এতে বলা হয়, গত বছর বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর ৮৫ জন নারী ও শিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬টি ধর্ষণ ও গণধর্ষণ ৩টি হত্যা, শারীরিক লাঞ্ছনা ১১টি, ধর্ষণচেষ্টা ১৬টি, অপহরণ ৫টি।
“এসব ঘটনার ৭৮ শতাংশের সঙ্গে বাঙালিরা জড়িত। ১৫ শতাংশ ঘটনার সঙ্গে স্বয়ং আদিবাসীরা এবং এক শতাংশ ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জড়িত।”
নির্যাতিত ১৩৪ জনের মধ্যে ১০১ জন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং ৩৩ জন সমতলের বলে উল্লেখ করা হয়।
“এর বড় অংশই সংগঠিত হয়েছে প্রভাবশালী বাঙালিদের হাতে। এসব কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও পরোক্ষ সমর্থন ছিল,” বলেন কাপেং ফাউন্ডেনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অক্সফাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় তৈরি এই প্রতিবেদন বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন তিনি।
তিনি জানান, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় গত বছর ৪৬টি মামলা হয়েছে, কয়েকটির মীমাংসা হয়েছে স্থানীয় সালিশির মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৭৪ জন ফৌজদারি অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন, যা আগের বছর চিল ৫ জন। গত বছর ১৯১ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে মিথ্যা অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে।
গত বছর সারাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কমপক্ষে ১১৮টি পরিবারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, “বহুদিন ধরে আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ হয়েছে।
“স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ৭ মার্চসহ প্রতিটি দিবসে আমরা বলি- অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ চাই। কিন্তু মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদন সেই চাওয়াকে পূর্ণ করে না।”
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে নিজের ক্ষোভও প্রকাশ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
“স্পষ্টভাবে বলছি, আজকে যারা আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ করতে পারছেন না তারা মুক্তিযুদ্ধের বোধ ও চেতনাবিরোধী কাজ করছেন; ইচ্ছায় হোক, আর অনিচ্ছায় হোক।”
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানমও অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন।