যুবদলের এক নেতার স্ত্রীকে ‘যৌন হয়রানি’র অভিযোগে ঢাকার আদাবর থানার এসআই রতন কুমার হাওলাদারের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত; এছাড়া তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
Published : 01 Feb 2016, 03:57 PM
ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সালেহউদ্দিন আহম্মেদ সোমবার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী আবু আলা মো. হাসানুজ্জামান হেলালী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঘটনার শিকার ওই তরুণী মামলার আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মাননীয় আদালত এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
“এখন বিধি অনুযায়ী এই অভিযোগ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যাবে। মুখ্য মহানগর হাকিম একজন মহানগর হাকিমকে তদন্তের নির্দেশ দেবেন।”
এদিকে পুলিশের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (প্রটেকশন) সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. মারুফ হোসেন সরদার।
মহানগর পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে গঠিত এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ও উপ-কমিশনার (ডিবি পশ্চিম) মো. সাজ্জাদুর রহমান।
কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পুলিশের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন জানান।
এর আগে রোববার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই তরুণীর অভিযোগের পর রাতেই এসআই রতনকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সোমবার সকালে তাকে সাময়িক বরখাস্তও করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
ওই তরুণীর স্বামী আদাবর থানা যুবদলের একজন নেতা। গত বছর বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
আদালতে তরুণীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার বিকাল ৩টার দিকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের কাছে যাচ্ছিলেন বই কেনার জন্য।
এ সময় এসআই রতন ও দুইজন কনস্টেবল তার রিকশা থামায় ও নামতে বলে। তিনি নামতে অস্বীকার করলে তার কাছে ইয়াবা আছে বলে তাকে জোর করে রিকশা থেকে নামায়। এরপর জাপান গার্ডেন সিটির কাছে একটি ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানে নিয়ে যায় তারা।
সেখানে দোকানের সব কর্মচারীকে বের করে দিয়ে দোকানের শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এসআই রতন জোর করে ওই তরুণীর শরীর থেকে জ্যাকেট খুলিয়ে তার ভ্যানিটি ব্যাগ তল্লাশি করেন।
অভিযোগকারী তরুণী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, “সে (এসআই রতন) বারবার জানতে চায়- আমার স্বামী কোথায়। না বললে ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখায়।
“আমি বারবার মহিলা পুলিশ বা আশপাশের কোনো মহিলার সামনে অথবা থানায় নিয়ে তল্লাশি করার অনুরোধ জানালেও সে তা করেনি। এ সময় অশ্লীল কথাবার্তা বলা ছাড়াও উনি আমাকে হোটেলের পতিতা এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করেন।”
অন্যদিকে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই রতন বলেন, স্বামী বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় ওই নারী আগে একবার থানায় গিয়েছিলেন। তখনই তাদের পরিচয় হয়।
“রোববার হঠাৎ দেখা হওয়ায় রিকশা থামিয়ে তার স্বামীর খোঁজ জানতে চেয়েছি, এর চেয়ে বেশি কিছু না। স্বামী সাভারে আছে জানিয়ে সে চলে গেছে। আমার বিরুদ্ধে হয়রানির যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
ওই যুবদল নেতা বর্তমানে জামিনে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই বলে জানান রতন।