আইন প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা যে মাঝে মধ্যে ‘অপেশাদার’ আচরণ করে ফেলেন, এবং তাদের আচরণ ও নৈতিকতার স্খলন পুরো বাহিনীর অর্জনকেই যে ম্লান করে দেয়, সে কথা স্বীকার করলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।
Published : 24 Jan 2016, 03:52 PM
তবে নিজের বাহিনীর পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানতে চান না বলেই পুলিশকে আইন প্রয়োগ করতে হয়।
‘পুলিশ সপ্তাহ’ সামনে রেখে রোববার ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল হক বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য যে এ দেশের অনেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানতে চায় না। ফলে আইন প্রয়োগ করতে হয়।
“অল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে অধিক নাগরিকদের ওপর আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে কখনো কখনো মুষ্টিমেয় পুলিশ সদস্য অতিরঞ্জন করেন, অপেশাদার আচরণ করে ফেলেন, যার দায়ভার পুরো পুলিশ বিভাগকে নিতে হয়।”
শহীদুল হক বলেন, “আমরা স্বীকার করি, অতি নগন্য সংখ্যক পুলিশ সদস্যের অপেশাদার আচরণ ও নৈতিকতার স্খলন সমগ্র বাহিনীর অনেক বড়বড় অর্জনকে কখনো কখনো ম্লান করে দেবার উপক্রম করে।”
তবে ব্যক্তি পুলিশের অপরাধের দায় বাংলাদেশ পুলিশ নেবে না জানিয়ে আইজিপি বলেন, “কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই তা অনুসন্ধান করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়”
বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন্স বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাশকে পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় সমালোচনার মধ্যেই পুলিশ প্রধানের এই বক্তব্য এলো।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের কাছে রাব্বীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে মাদকসেবী বানানোর ভয় দেখিয়ে এসআই মাসুদ অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
এরপর ১৫ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ি থানার এসআই আরশাদ হোসেন আকাশসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য মীরহাজীরবাগ এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাশকে মারধরকরেন।
বিকাশ মোটরসাইকেল চালিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজ দেখতে গেলে সাধারণ পোশাকে থাকা পুলিশের দল তাকে থামার সংকেত দেয়। এরপর বিকাশ নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে মারধর করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এ দুই ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি সাভারে কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশে শহীদুল হক বলেন, “যেহেতু রাব্বী সাহেব পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন, সেটি ফৌজদারি অপরাধের শামিল।”
আইজিপি জানান, গত ৫ বছরে বিভিন্ন অপরাধে ৭০৯ জন পুলিশ সদস্য বিভাগীয় শাস্তির আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেন। এদের মধ্যে ২৯৩ জন দণ্ড থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
“এ থেকে বোঝা যায়, পুলিশ কাউকেই ছাড় দেয় না,” বলেন তিনি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীকে ‘সফল’ দাবি করে আইজিপি বলেন, “আমাদের নানা প্রচেষ্টা ও নজরদারি সত্ত্বেও দেশে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জঙ্গি কার্যক্রম সংঘটিত হয়েছে। সবগুলো প্রতিরোধ করা না গেলেও সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ ঈর্ষনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। বিশেষ করে গতবছর বা তার আগে একটিও জঙ্গি ঘটনা নেই, যা পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি।”
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সম্প্রতি আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বৈঠক করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিষয়টি কেবল পুলিশি কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ‘বৃহত্তর পরিসরে’ কাজ শুরু হয়েছে।
“জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সারা বিশ্বেই বিশেষায়িত ইউনিট থাকে। আমরা এখনো এ জাতীয় ইউনিট গঠন করতে পারিনি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৬ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহের শুরুর দিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বার্ষিক কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুলিশ সপ্তাহে এবার ১০২ জনকে পদক দেওয়া হবে। তার মধ্যে ছয়জনকে মরণোত্তর বিপিএম, ১৯ জনকে বিপিএম (সাহসিকতা), ২৩ জনকে বিপিএম (সেবা), ২০ জনকে পিপিএম, এবং ৪০ জনকে পিপিএম (সেবা)পদক দেওয়া হবে।
২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ৯২দিনের টানা অবরোধ-হরতালে নাশতকায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং ৩৩৯ জন আহত হন বলে জানান আইজিপি।
তিনি বলেন, পুলিশ ছাড়াও ৮০ জন সাধারণ নাগরিক সেই নাশকতায় নিহত হয়েছেন। সেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৮৪১টি।
পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান, সিআইডি প্রধান শেখ হিমায়েত উদ্দিন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান জাভেদ পাটোয়ারি, র্যা ব প্রধান বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।