ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সবশেষ পৌর ভোটের প্রচার নিয়ে বিভ্রান্তির পর দলীয়ভাবে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সব প্রার্থীর সমানাধিকার নিশ্চিতে প্রতীক নিয়েই প্রচারের বিধান করা হয়েছে।
Published : 21 Jan 2016, 10:36 AM
এছাড়াও বিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিল এবং দলের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ বেশকিছু সংশোধনীসহ আচরণবিধি চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন, যা রোববারের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, “ইউপি আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলভিত্তিক পৌর ভোট করায় ওই আচরণবিধির আদলেই প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রচারে বিধিনিষেধ রয়েছে আগের মতোই।”
নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালা মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে গেজেট প্রকাশ করবে কমিশন। এরপরই তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।
সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশই মার্চ-জুলাইয়ে নির্বাচন উপযোগী হচ্ছে।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রচারের জন্য এখন আর কেউ তিন সপ্তাহের সুযোগ নিতে পারবে না।মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরই সবাই একসঙ্গে প্রচারে নামতে পারবে।
বিদ্যমান আচরণবিধিতে রয়েছে, ‘কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত ২১ দিন পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।’
এটি সংশোধন করে এবার প্রস্তাব করা হয়েছে- ‘কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল কিংবা দল মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচার শুরুর সময় নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি হয়েছিল। এখন দলীয়ভাবে ভোট হচ্ছে। এজন্য দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী- সবার জন্য সমান সুযোগ করা হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচার শুরু করলে কোনো বৈষম্যের সুযোগ থাকল না।”
ভোটের অন্তত তিন সপ্তাহ আগে (২১ দিন) প্রচারের বিধান না থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর প্রতীক নিয়ে আনুষ্ঠনিক প্রচার শুরুর প্রথা রয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটের তফসিলে প্রত্যাহারের তারিখের পর মাত্র ১৫-১৭ দিন সময় রাখে নির্বাচন কমিশন।
দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা দলের প্রতীক নিয়েই অনানুষ্ঠানিক প্রচারের সুযোগ পান। তবে স্বতন্ত্র ও নির্দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রচারে পিছিয়ে পড়ার অভিযোগ ছিল।
দলভিত্তিক হওয়ায় পৌর ভোটের মতো ইউনিয়ন পরিষদেও ‘নির্বাচনী প্রচারে সমানাধিকার’ নতুন দফা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা দল মনোনীত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য যে কোনো ব্যক্তির সমান অধিকার থাকবে।
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে এবার, যে বিধানটি বিদ্যমান ইউপি বিধিতে ছিল না।
দলীয় প্রার্থীরা সাদাকালো পোস্টারে নিজের ও প্রতীকের ছবি এবং দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজ ছবি ও প্রতীকের বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তিত্বের নাম ব্যবহার করতে পারবেন না। পোস্টার, লিফলেট বা প্রচার সামগ্রী কোনো যানবাহন, দেয়াল ও স্থাপনায় লাগানো যাবে না। তবে নির্বাচনী এলাকায় ঝুলিয়ে রাখা যাবে।
প্রচারকাজে মাইকের ব্যবহার বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত করা যাবে। পথসভা ও ঘরোয়া সভার অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে সভার স্থান ও সময় জানাতে হবে। প্রচারে কোনো প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না।
কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা ও প্রত্যাহারের সময় দলের পক্ষ থেকে বা কোনো ব্যক্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।
মিছিল-শোডাউন নিষিদ্ধ; মনোনয়নপত্র জমায় ৫ জনের বেশি লোক নেওয়া যাবে না; তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন বরাদ্দ, দেয়াল লিখন, তোরণ নির্মাণ, উস্কানীমূলক বক্তব্য ও সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের সার্কিট হাউজ-বাংলো ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিধিলঙ্ঘনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। দলীয় ভোট হওয়ায় এ দলের ক্ষেত্রে জরিমানা ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
কোনো দল বা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, “আমরা শুধু সংশোধনী এনেছি। আগের ইসি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই তা করে রেখেছিল। আগের একটা ভিত্তি থাকায় নতুন করে কারও সঙ্গে আলোচনা না করলে কোনো অসুবিধা রয়েছে বলে মনে করছি না।”