আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যেতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মর্যাদা’ পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
Published : 11 Jan 2016, 09:03 PM
শিক্ষকদের অবহেলা করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “আমরা তো কোনো জায়গা থেকে ভেসে আসি নাই। আমরা নিজের যোগ্যতা নিয়ে এখানে এসেছি। কারও দয়ায় হই নাই, কোনো কোটায়ও হই নাই। আমরা তো কখনো ‘ব্যাকবেঞ্চার’ ছিলাম না।”
প্রায় নয় মাস আগে অষ্টম বেতন কাঠামোর প্রস্তাব আসার পর থেকেই গ্রেডে মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলনে রয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
দাবি আদায় না হওয়ায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা, যাতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
এ পরিস্থিতিতে বিকালে রাজধানীতে এক জনসভায় শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “শিক্ষকদের জন্য আরও কিছু করার থাকলে, সরকার সেটা অবশ্যই বিবেচনা করবে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোন বন্ধ করবেন না। ক্লাস না নিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করলে তারা তা মেনে নেবে না।”
সম্প্রতি চালু হওয়া নতুন বেতন কাঠামোতে ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এতো বেতন বাড়ানোর পরেও কেন অসন্তোষ?”
তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতা ফরিদ উদ্দিন বলেন, “বেতন কি শুধু শিক্ষকদের বাড়ানো হয়েছে? পিয়ন থেকে শুরু করে সবার বেতন বেড়েছে।”
বেতন এতো বাড়ার পরও কেন এই অসন্তোষ তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আগে তো কখনো এমন প্রতিবাদ ও অসন্তোষ দেখা যায় নাই। এবার কেন এমন অসন্তোষ, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
“আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, কেন এতো বেতন বৃদ্ধির পর সর্বমহল থেকে এই অসন্তোষ তা খতিয়ে দেখেন, তলিয়ে দেখেন। এটা ওনার বুঝতে হবে, জানতে হবে।”
শিক্ষকদের বক্তব্য তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী সময় চেয়ে পাঁচ/ছয়বার চিঠি পাঠানো হলেও তার কোনো সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ।
আন্দোলন অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমাদের কী করার আছে? আমরা তো অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছি, কোনো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করি নাই। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার কোনো বিঘ্ন ঘটাই নাই।”
এখন ‘বাধ্য হয়েই’ কর্মবিরতিতে গেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, “মর্যাদার পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
এর আগে সকালে শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির শুরুতে শিক্ষকদের আন্দোলনে ‘নামানোর’ জন্য আমলাদের দায়ী করেন অধ্যাপক ফরিদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা (আমলা) এখন আমাদের ৯টা-৫টা ডিউটি করার কথা বলছে। আমরা তো কেরানী না যে নয়টা-পাঁচটা ডিউটি করব। আমাদের অফিস তো ২৪ ঘণ্টা।
“আমাদেরকে নয় মাস ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়ে এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আমলারা ইচ্ছা করেই এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ওরা ভাবছে ওরা কুলীন লোক, ওদের পর্যায়ে কাউকে দেওয়া যাবে না।”