উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে যেভাবে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, সাত খুনের আসামি নূর হোসেনকে সেভাবেই ফেরত আনার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
Published : 11 Nov 2015, 07:14 PM
তবে এটা বিনিময় হিসেবে না দেখতে সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি। তার ভাষ্য, ভারতের সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্কের’ কারণে নূর হোসেনকে ফেরত পাওয়া যাবে।
আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতা অনুপ চেটিয়াকে বুধবার ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশে দেড় দশক ধরে বন্দি এই বিদ্রোহীকে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ে আসছিল নয়া দিল্লি।
ভারতের সংবাদ মাধ্যমে চেটিয়াকে হস্তান্তরের খবর প্রকাশ হওয়ার পর সকালে মন্ত্রী প্রথমে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেছিলেন, তিনি কিছু জানেন না। তবে দেড় ঘণ্টা পর তিনি হস্তান্তরের কথা স্বীকার করেন।
এর আধা ঘণ্টা পর দুপুরে আসাদুজ্জামান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে বলেন, অনুপ চেটিয়ার ইচ্ছায় বুধবার সকালে তাকে ভারতে যেতে দেওয়া হয়েছে।
চেটিয়াকে হস্তান্তরের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ফেরত আনার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।
দীর্ঘদিন ধরে রাখার পর এখন কীসের বিনিময়ে চেটিয়াকে হস্তান্তর করা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি মন্ত্রী বলেন, “কাউকে দিব, কাউকে নিব, এই ধরনের সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে আমাদের নেই।
“ভারতের সঙ্গে একটি ভালো সম্পর্ক আমরা ‘মেনটেইন’ করে চলি। বন্ধুপ্রতীম দেশ, আমাদের যখন সমস্যা হয়, তারা (ভারত) সহযোগিতা করেন এবং তাদের যখন সমস্যা হয়, আমরা সহযোগিতা করি।”
“কাজেই একটার বদলে আরেকটি দিব, এই প্রশ্নটিই আসে না এখানে,” বলেন আসাদুজ্জামান কামাল।
গত বছর নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের পর পালিয়ে ভারতে যান নূর হোসেন। পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়ার পর তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অস্ত্র আইনে মামলা হয়, তার বিচার চলছে। নূর হোসেনকে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
অনুপ চেটিয়াও ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে ধরা পড়ার পর অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় পড়েন। বিচারে তার সাত বছর কারাদণ্ড হয়। সাজার মেয়াদশেষ হলেও তাকে ফেরত পাঠানো হয়নি এতদিন।
উলফা নেতাকে ফেরতের প্রক্রিয়া জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যখন কোনো বিদেশি আমাদের কারাগারে থাকে, আমরা সব সময়ই সে দেশের দূতাবাসকে জানিয়ে দিই যে এই লোক আমাদের কারাগারে আছে কিংবা তার আটকাদেশ শেষ হয়েছে। তারাই (দূতাবাস) যোগাযোগ রাখে।
“আমরা জেলখানা থেকে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের সীমানা পার হয়েছে, এটুকু আমরা জানি।”
বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী উলফা নেতাকে দেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী ‘না’ সূচক উত্তর দিয়ে বলেন, “আমি তো বললাম আমরা বন্ধুপ্রতীম দেশ। সব সময় আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করি।”
হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বর্ডারের মাধ্যমে যখন যায়, তখন এক দেশ থেকে আরেক দেশে গেলে যদি এটাকে ‘হ্যান্ডওভার’ বলেন, তাহলে ‘হ্যান্ডওভার’ হয়েছে। আমাদের বিজিবি, ওদের বিএসএফ, দু’পক্ষের মাধ্যমে গেছে।”
এটা নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না-না কোনো গোপনীয়তা নাই। আমাদের কথা হল, ভারতের দূতাবাস কীভাবে নিয়ে যাবে, সেটা তারা জানে।”
কারাবন্দি অবস্থায় অনুপ চেটিয়া জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন করেছিলেন, তার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তা হেফাজতে তাকে রাখার আদেশ ছিল হাই কোর্টের।
এই বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে আটক অবস্থায়ই উনি (অনুপ) রিটটি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং যাওয়ার সময় তিনি বলেছেন, ‘আমি স্বজ্ঞানে, সুস্থ অবস্থায়, আমার নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছি’।”
চেটিয়ার সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারের আটক থাকা বাবুল শর্মা, লক্ষ্মী প্রসাদও সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গেছেন বলে জানান তিনি। উলফা নেতার সঙ্গে তার এই দুই সহযোগীও আটক হয়ে জেল খেটেছিলেন।