পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন দুই জেএমবি সদস্যকে তিন দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।
Published : 15 Oct 2015, 03:43 PM
এরা হলেন- ‘জেএমবির সংগঠক’ তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে মিঠু এবং গাড়িচালক আলেক বেপারী।
বৃহস্পতিবার এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আজিজুর রহমান দুজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেন।
আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মুহাম্মদ রাশেদ তালুকদার দুজনকে তিন করে হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেন।
রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, খিজির খান হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচনে সন্দেহভাজন দুই জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।
আদালতে দুই জেএমবি সদস্যের পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি।
খিজির হত্যায় জড়িত সন্দেহে বুধবার টাঙ্গাইল থেকে তরিকুল ও রাজধানীর মিরপুর থেকে আলেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে খিজির খানের দুটি ল্যাপটপ ও দুটি ক্যামেরা পাওয়া গেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ দাবি করেছে, মোজাদ্দেদিয়া নকশেবন্দিয়া তরিকার ‘পীর’ খিজির খানের মতাদর্শকে ‘ধর্মীয় বিচ্যুতি’ ধরে নিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি সদস্যরা ‘ইমানি দায়িত্ব’ মনে করে তাকে হত্যা করেছে।
এই দুজনকে আদালতে নেওয়ার আগে দুপুরে ডিএমপির গণমাধ্যম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম, “পীর, ফকির ও মাজার সেবকদের খুনিরা পছন্দ করে না। তারা দাবি করে, ইসলামে পীর বলে কোনও শব্দ নেই। পীর হত্যাকে তারা ইমানি দায়িত্ব বলে মনে করায় খিজির খানকে হত্যা করেছে।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এই হত্যাকাণ্ডে অন্তত ৮ জন অংশ নেয়; এক দল ঘটনাস্থল রেকি করে, আরেক দল হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
গ্রেপ্তারকৃত দুজনের মধ্যে দেলদুয়ারের মৌলভীপাড়ার পিয়ার আলীর ছেলে তরিকুলকে জেএমবির ‘কট্টরপন্থি’ নেতা পলাতক ফারুকের অন্যতম অনুসারী এবং আলেক বেপারী পেশায় গাড়িচালক বলে বলে জানান মনিরুল।
তিনি বলেন, তরিকুল সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। আর আলেক জেনে-বুঝে খুনিদের খিজির খানের বাসায় নিয়ে যায় এবং হত্যার পর সেখান থেকে তাদের পালাতে সাহায্য করে।
ডিএমপির উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওরা (খুনিরা) মনে করে কাউকে মেরে ফেলার পর তার সম্পত্তি গনিমতের মাল হওয়া যায়।
“তাই তারা খিজির খানের বাসা থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করেছিল।”
গত ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় নিজের বাড়িতে খুন হন ৬৮ বছর বয়সী খিজির খান। ওই বাড়িতে ছিল রাহমানিয়া খানকা শরীফ, তাকে অনেকে পীর মানত।
নিহত খিজিরের বাবা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগরের বাসিন্দা হাবিব রহমত উল্লাহও তিনি পীর ছিলেন। প্রায় ১২ বছর আগে তার মৃত্যুর পর পীরের ছেলে হিসেবে খিজির খানের শিষ্যত্ব নেন মুরিদরা।
এক বছর আগে ২০১৪ সালের ২৭ অগাস্ট ঢাকার রাজাবাজারের বাসায় একইভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল ইসলামী ফ্রন্টের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। তার আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর গোপীবাগে খুন করা হয় কথিত পীর লুৎফর রহমানকে।
ওই দুটি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা গোয়েন্দারা করতে না পারলেও তাদের ধারণা, মতাদর্শিক বিরোধের কারণে জঙ্গিবাদীরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।