মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরও আন্দোলনে অটল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে দাবি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে পূরণ না হলে ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 01:18 PM
Updated : 6 Oct 2015, 07:02 PM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে বৈঠকে ক্লাস পরীক্ষা-ভর্তি বিঘ্নকারী কোনো কর্মসূচি না দিতে শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধের পরও এই ঘোষণায় অনড় থাকেন শিক্ষক নেতারা।

মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাওয়ার আগে সকালে ফেডারেশনের সভায় এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে তা মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলে ফেডারেশনের মহাসচিব এএসএম মাকসুদ কামাল জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করি, এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ করা হবে। তবে দাবি পূরণ না হলে লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।”

বৈঠকের আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন শিক্ষক নেতারা।

বৈঠকের পর নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কীভাবে অগ্রসর হতে পারি, সেই বিষয়ে আলোচনা করতে এখানে শিক্ষা পরিবারের সদস্যরা এখানে একত্রিত হয়েছি। যে সমস্যাগুলো স্যারেরা বলেছেন, সেইটা শুনে কীভাবে প্রস্তুতি নেব, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

“উনাদের কাছে আমি বারবার অনুরোধ করছি, আমাদের ভর্তির সময়। এই ভর্তির প্রক্রিয়া যেন অব্যাহত থাকে। ক্লাস যেন অব্যাহত থাকে। তারা বলেছেন, পরীক্ষা বা ভর্তি ব্যাহত হবে না। তারপরে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কি না, সেটা পরের ব্যাপার।”

বিদেশ থেকে অর্থমন্ত্রী ফিরে এলেই এই বিষয়টির সুরাহার আশা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে মাকসুদ কামাল বলেন, “নভেম্বরে হয়ত পরীক্ষা-ভর্তি আছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই নেই। তবে আশা করি, কর্মবিরতির দরকার হবে না। এর মধ্যেই আমাদের দাবি মানা হবে।”

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈষম্য দূরীকরণ কমিটিতে যে মন্ত্রীরা রয়েছেন, তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তারা।

শিক্ষামন্ত্রীর কাছে শিক্ষকদের দেওয়া দাবিনামায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো করতে অবিলম্বে বেতন কমিশন গঠন করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের গ্রেড-১, অধ্যাপকদের গ্রেড-২, সহযোগী অধ্যাপকদের গ্রেড-৩, সহকারী অধ্যপকদের গ্রেড-৫ এবং প্রভাষকদের গ্রেড-৭ অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিতে হবে।

গ্রেড-১ এ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্যে ২৫ শতাংশ শিক্ষকের জন্য ‘সুপার গ্রেডের’ দুই নম্বর ধাপে বেতন-ভাতা চেয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেই সঙ্গে সরকারের পদমর্যাদাক্রম অনুযায়ী শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং ‘সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ’ সুযোগ-সুবিধা তারা চেয়েছেন।

অষ্টম বেতন কাঠামোতে ‘সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক’ পদটি বিলুপ্ত করে সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের সচিবদের সমান গ্রেড-১ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য নতুন একটি বিশেষ গ্রেড তৈরি করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, আমলারা নিজেদের জন্য বিশেষ গ্রেড তৈরি করলেও শিক্ষকদের সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফলে অধ্যাপকরা আমলাদের নিচের স্কেলে থাকছেন।

আলাদা বেতন কাঠামোর দাবিতে গত তিন মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এর প্রতিবাদে গত তিন মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের দাবির বিষয়টি পর্যালোচনা করতে সরকার ইতোমধ্যে ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’ পুনর্গঠন করেছে।

তারপরও শিক্ষকরা আন্দোলন থেকে সরে না আসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতদিন এই আন্দোলন শেষ না হচ্ছে, ততদিন তাদের বর্ধিত বেতনও নেওয়া ‘উচিৎ হবে না’

অষ্টম বেতন কাঠামোতে ৯১ শতাংশ বেতন বাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয় একটু বেশি দিয়ে ফেলেছি। একটু কমায় দেওয়া ভালো ছিল।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ শিক্ষকরা

বেতন বৈষম্য নিরসন দাবির আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ হওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

মঙ্গলবার ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ”আমরা মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক ভুল তথ্য পরিবেশনপূর্বক তাকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস মাত্র।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষকদের গত পাঁচ মাসের চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করার মতো কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। বস্তুত অর্থে শিক্ষকদের এই কর্মসূচিগুলো ছিল প্রতীকী ও সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণের প্রয়াস।

ফেডারেশনের মঙ্গলবারের সভার শুরুতে চ্যাম্পিয়নস অফ দ্য আর্থ ও আইসিসি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।