প্রধানমন্ত্রীর ফেরা, আর যানজটের দুর্ভোগ

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন থেকে ফেরা প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনার আয়োজনে বিভিন্ন সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2015, 08:16 AM
Updated : 3 Oct 2015, 08:16 AM

জাতিসংঘ সফর শেষে ফিরে শনিবার বেলা ১টায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর সড়ক পথে সরাসরি গণভবনে যান শেখ হাসিনা।

তাকে সংবর্ধনা দিতে সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মিছিল বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের পাশে অবস্থান নেয়।

এসব মিছিলের কারণে ফার্মগেইট, মহাখালী, বনানী, খিলক্ষেত থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলাচলের গতি সকাল থেকে ছিল ধীর।

প্রধানমন্ত্রীর ফেরার সময় দুপুর ১টা থেকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চলাচল আটকে দিলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।      

ঈদের ছুটির পর গত কয়েকদিনে রাজধানীতে যানজট ছিল না বললেই চলে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও যানজটে পড়তে হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা গণসংবর্ধনায় যোগ দিতে বাস ভাড়া করায় নগরে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। ফলে যানবাহন না পাওয়া নিয়েও ধকল পোহানোর কথা জানিয়েছেন অনেকে।

প্রধানমন্ত্রী নামার পর বিমানবন্দরের উভয় পাশের সড়কে ১টার দিকে চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তখন সেখানে আটকে যায় যাত্রীবাহী অনেক গাড়ি।  

বিমানবন্দরে আটকে পড়া অটোরিকশা চালক মিজানুর রহমান দেড়টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আধ ঘণ্টার উপর এখানে আটকে আছি।”

খিলক্ষেত থেকে উত্তরামুখী সড়কের গাড়িগুলো বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিটালের দক্ষিণ পাশে আটকে রাখা হয়। ১টা ২০ মিনিটের পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর ওই রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়ার ২০ মিনিট পর উত্তরামুখী সড়কের গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।

গাড়ি নেই, তাই হাঁটা। কাওলা এলাকার চিত্র

এর পাঁচ মিনিট পর উত্তরা থেকে খিলক্ষেতমুখী সড়কের গাড়িও ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এই গাড়ি ছাড়ার আগেই বিমানবন্দরের যানজট পেছনে আজমপুর ছাড়িয়ে যায়।

সড়ক ছেড়ে দিলেও খিলক্ষেত পর্যন্ত চলার গতি ছিল ধীর।

এই সময় গাড়ি সঙ্কটে পড়তে হয় অনেককে, যাদের মধ্যে ছিলেন নাতাশা মাহমুদ। উত্তরার উইমেন্স কলেজের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে দুপুর ২টার দিকে কাঁদতে কাঁদতে খিলক্ষেতের দিকে যেতে দেখা যায়।

মহাখালীর তিতুমীর কলেজ কেন্দ্রে নাতাশা প্রথম বর্ষের ‘ব্যাস্টিক অর্থনীতি’ ফলোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন।

এই তরুণী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আজমপুর থেকে পৌনে ১২টায় বাসে উঠলেও এক ঘণ্টা পর জসীম উদদীন সড়কের মুখে এসে তিনি গাড়ি থেকে নেমে যান।

“সোয়া এক ঘণ্টা হেঁটে ২টার দিকে খিলক্ষেতের কাছাকাছি আসি। এর মধ্যে রাস্তায় গাড়ি চলতে শুরু করলেও ভিড়ের কারণে কোনো গাড়িতে উঠতে পারিনি।”

পরে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার সৈকত সাদিক অফিসে যাওয়ার পথে নাতাশা ও তার ভাই মো. লিটনকে তিতুমীর কলেজে নামিয়ে দেন।

২টায় পরীক্ষার নির্ধারিত সময় থাকলেও তিতুমীর কলেজে পৌঁছতে নাতাশার ২টা বেজে ২০ মিনিট সময় লেগে যায়।

মহাখালী ফ্লাইওভারে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি

প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর দুপুরে ২টায় মহাখালী ফ্লাইওভার অতিক্রম করে। তার আগ থেকে চলাচল আটকে দেওয়ায় তখন ফ্লাইওভারের উভয় পাশে কোনো গাড়ি ছিল না।    

ফার্মগেইট এলাকায় দীর্ঘক্ষণ ধরে গাড়ি না পাওয়ার কথা জানিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন চাকরীজীবী সায়েদ হোসেন।

বিজয় সরণিতে অবস্থানরত যুবলীগের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মালিবাগ ইউনিটের সভাপতি কাজী মিন্টু বলেন, “নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজারো মানুষের মতো আমিও উপস্থিত হয়েছি। দেশের জন্য তিনি পুরস্কার নিয়ে এসেছেন, এটি আমাদের সবার গর্ব।”

দুপুর দেড়টার দিকে বিজয় সরণি মোড় থেকে বিমানবন্দরে দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এর ফলে শাহবাগ পেরিয়ে যায় যানজট।

বিজয় সরণী থেকে চন্দ্রিমা উদ্যানের রাস্তার এক পাশে কৃষক লীগ অবস্থান নিয়ে ছিল। তাদের মুখে স্লোগান ছিল ‘শেখ হাসিনার জন্য/ বাংলাদেশ ধন্য’।

ফার্মগেইট থেকে মহাখালীমুখী সব গাড়ি আটকে

এই সড়কের অন্য পাশে পূজা উদযাপন কমিটি, যুবলীগকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এই রকম অবস্থান ছিল বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত পুরো সড়কজুড়ে।  

দুপুর ২টার দিকে সড়কে যান চলাচলে পুলিশ বাধা তুলে নিলেও বিকাল নাগাদ ছিল দুপুরের যানজটের রেশ।

নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা বিভিন্ন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিমানবন্দর ও তার আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করবেন জেনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

র‌্যাবের মুখাপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নিরাপত্তা জোরদারে র‌্যাব বিমানবন্দর এলাকায় অতিরিক্ত টহলে ছিল।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সহকারী কমিশনার তানজিলা আক্তারও বলেন, তারা সর্ব্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিলেন।