যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, তাদের তথ্য ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় সংগ্রহের কার্যক্রম কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 18 Aug 2015, 03:10 PM
মঙ্গলবার এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ভোটার তালিকা হাল নাগাদ কার্যক্রমের সঙ্গে ১৮ বছরের কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে গত ২৪ জুলাই সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এতে বলা হয়, ২৫ জুলাই থেকে সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হবে, তাদের তথ্যও চলমান হালনাগাদে সংগ্রহ করা হবে।
এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না সোমবার রিট আবেদনটি করেন। নির্বাচন কমিশনের ২৯ জুলাইয়ের একটি বিজ্ঞপ্তির অনুলিপিও আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
আবেদনে বলা হয়, তথ্যভুক্তির এই কার্যক্রম ২০০৯ সালের ভোটার তালিকা আইনের ১১ ধারা এবং ২০১২ সালের ভোটার তালিকা বিধিমালার ২৭ বিধির পরিপন্থি।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম মনজুর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু।
আদেশের পর মোতাহার হোসেন সাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত রুল দিয়েছেন, স্থগিতাদেশ দেননি। এর ফলে হালনাগাদ কার্যক্রমে ১৫, ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের তথ্যভুক্তিতে নির্বাচন কমিশনের আইনগত কোনো বাধা নেই।”
শাহদীন মালিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইন অনুযায়ী নির্বাচন প্রতিবছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বাধ্যবাধকতা নির্বাচন কমিশনের আছে। আর ভোটার তালিকা হালনাগাদ বলতে কী বোঝায়, তা বলা আছে ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ এর ১১ ধারায়।
“সেখানে বলা আছে, গত বছর যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যারা মারা গেছেন, তাদের নাম কর্তন করতে হবে। আর যাদের ঠিকানা বদলেছে, সেই পুরানো ঠিকানা বাদ দিয়ে তাদের নতুন ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটা হল আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্যক্রম।”
যাদের বয়স ১৮ বছর হয়নি, তাদের তথ্য এ হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন এই আইনজীবী।
“সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ভোট হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটার তালিকা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্তি সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ, ২০০৯ সালের ভোটার তালিকা আইনের ১১ ধারা এবং ২০১২ সালের ভোটার তালিকা বিধিমালার ২৭ বিধির লঙ্ঘন।”
অন্যদিকে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, “ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, কেনো অবস্থাতেই ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিকে ভোটার করা হবে না। নির্বাচন কমিশন তাদের তথ্য সংগ্রহ করছে। ফলে এখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি।”
মোতাহার হোসেন বলেন, সরকার নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ১৫, ১৬ ও ১৭ বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন নজির রয়েছে।
ইসি বলছে, তথ্য সংগ্রহ করা হলেও ১৮ বছরের কম বয়সীরা এখনই ভোটার হচ্ছেন না। ভোটারযোগ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত হবেন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৫-১৭ বছর বয়সী নাগরিকদের সম্ভাব্য সংখ্যা হতে পারে ৭২ লাখ। ছয় মাস ধরে তাদের নিবন্ধন কাজ শেষ করতে প্রায় ৮১ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে।