ভারি বর্ষণ, বন্যা বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা মাথায় না রেখে ভরা বর্ষায় একসঙ্গে দেশের এক তৃতীয়াংশ উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহে নেমে বেকায়দায় পড়েছেন নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তারা।
Published : 07 Aug 2015, 09:32 AM
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজে বিঘ্ন ঘটছে জানিয়ে তারা বলেছেন, এতে প্রথম ধাপের উপজেলাগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে; নারী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তিও হতে পারে কম।
বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় তথ্য সংগ্রহের সময় বাড়ানোর দাবিও কমিশনের হাতে এসেছে।
নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব আবদুল অদুদ বলেন, “প্রথম ধাপে ১৮৯ উপজেলার তথ্য সংগ্রহের জন্য ৯ অগাস্ট পর্যন্ত সময় রয়েছে। সব দিক বিবেচনায় প্রয়োজন মনে হলে বিষয়টি ইসির নজরে আনা হবে।”
দেশে ভোটার সংখ্যা বর্তমানে ৯ কোটি ৬২ লাখের বেশি। প্রতিবছর আড়াই শতাংশ হিসেবে এবার হালনাগাদে সাড়ে ৭ শতাংশ নতুন নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ হতে পারে; যার সংখ্যা হবে প্রায় ৭২ লাখ।
দেশজুড়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদের এই কাজ শুরু হয়েছে গত ২৫ জুলাই থেকে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বা তার বেশি হবে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে।
কিন্তু মধ্য শ্রাবণে এসে সারাদেশের ওপর সক্রিয় রয়েছে মৌসুমী বায়ু। নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারি বর্ষণ হয়েছে গত সপ্তাহে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় টানা বেশ কয়েক দিন আবহাওয়া ছিল বৈরী। নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু মানুষ।
এবার ঈদের পরপর তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করায় মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিও কম ছিল বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বিভোর কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার এলাকার ২১ উপজেলায় তথ্য সংগ্রহ চলছে। এর মধ্যে নোয়াখালী-ফেনীর অনেক এলাকা টানা বর্ষণে প্লাবিত।
“পানি ওঠায় অনেক এলাকায় লোকজন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রয়েছে। কোথাও পুরুষ লোকজন থাকলেও নারীরা বাড়িতে নেই। রাস্তায়ও হাঁটু পানি। তথ্যসংগ্রহকারীও পানিবন্দি।”
এ অবস্থায় তথ্যসংগ্রহের কাজ চালিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান বিভোর।
“ইতোমধ্যে টার্গেটের ৫ শতাংশের মতো তথ্য সংগ্রহ হয়েছে। এসব এলাকায় দু-তিন দিন সময় বাড়ানোর দরকার হতে পারে। বিষয়টি কমিশনকে জানাব,” বলেন এ নির্বাচন কর্মকর্তা।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে যথেষ্ট প্রচার চালানো যায়নি অনেক এলাকায়। এমনকি তথ্য সংগ্রহ্কারীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না বলেও কোথাও কোথাও অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, “এলোমেলো অবস্থায় কাজ শুরু হয়েছে। ভরা বর্ষায় কাজ শুরু না করে কিছুদিন দেরিতে করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ইসি রাজি হয়নি। এখন তথ্যসংগ্রহকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”
অবশ্য হাওর এলাকায় খুব একটা সমস্য হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এজহারুল হক।
তিনি বলেন, “হাওর এলাকায় বর্ষায় নৌকায় চলাচল করতে হয়, হালনাগাদও সেভাবে চলছে। কাজ কিছুটা ধীর গতিতে হলেও তেমন বিঘ্ন ঘটেনি।”
কক্সবাজার, বান্দরবানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, ভারি বর্ষণ ও বন্যায় শুরুর দিকে কিছুটা ঝামেলা হলেও রোববার থেকে ‘স্বাভাবিকভাবেই’ কাজ চলছে।
“হালনাগাদ কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করলে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাব।”
বন্যার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের পেকুয়া ও রামু উপজেলার তথ্যসংগ্রহের সময় পাল্টানো হয়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির উপ-সচিব আবদুল অদুদ বলেন, “সারাবছরই তো ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ভোটার হতে না পারলেও পরে উপজেলায় এসে কিংবা নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে তথ্য দেওয়া যাবে। তারপরও কমিশন সার্বিক বিষয়ে জেনে নিয়ে প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত দেবে।”
বর্তমানে যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছর (যাদের জন্ম ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে), তাদের তথ্যও এবার সংগ্রহ করছে কমিশন। দেশের ৫১৪ উপজেলায় তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে এ কাজ চলবে।
৯ অগাস্ট প্রথম ধাপ শেষে ১৬ অগাস্ট থেকে ১৮৪ উপজেলায় এবং ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪১ উপজেলায় হালনাগাদ শুরু হবে।