সোমবার রাতে খুলনা নগরীর টুটপাড়া কবরস্থানের কাছে মোটরসাইকেলের ওয়ার্কশপ শরীফ মোটরসের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল আকিব (ছদ্মনাম)। রাকিবের চিৎকার শুনে সেখানে যায় সে।
এই শিশুটি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “মেশিন দিয়ে যখন রাকিবের পেটের ভেতরে বাতাস ঢুকাচ্ছিল, তখন সে শুধু বলছিল- ‘মামা আর দিয়েন না, আমি মরে যাব’।”
খান জাহান আলী সড়কের ওই গ্যারেজে এক সময় কাজ করত ১২ বছরের রাকিব, মালিক শরিফের দূর সম্পর্কের চাচা মিন্টু মিয়াকে ডাকত মামা বলে। কিন্তু নির্যাতন চালানো হত বলে সেই কাজ ছেড়ে পিটিআই মোড়ে অন্য একটি গ্যারেজে কাজ নেয় সে।
সেই কারণে মিন্টু মিয়া ক্ষুব্ধ হয় এবং তার উপর নির্মম নির্যাতন চলে বলে রাকিবের পরিবারের অভিযোগ। আর এই নির্যাতনই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় শিশুটিকে।
নির্যাতনের পর রাকিবকে প্রথমে নেওয়া হয় কাছের একটি ক্লিনিকে, সেখান থেকে পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকায় নিতে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালেও রাকিবের মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফটের কথা ভুলতে পারছেন না তার মা লাকি বেগম।
“রাকিব আমাকে বলে, মা আমি আর বাঁচব না, যন্ত্রণায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। ও মা আমাকে তুমি বাঁচাও মা।”
টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের বাসায় সন্তান হারানো লাকির এই আর্তনাদ ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবাইকে। চোখের জল ধরে রাখতে না পেরে প্রতিবেশীদের অনেকেই বেরিয়ে আসেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের যে চিকিৎসক রাকিবকে দেখেছেন, সেই সুমন রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুটির শরীরে অস্বাভাবিক পরিমাণ বাতাস প্রবেশ করানোয় তার পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিড়ে গিয়েছিল, ফুসফুসও ফেটে যায়।”
রাকিবের মৃত্যুর পরপরই স্থানীয়রা গ্যারেজ মালিক শরীফ (৩৫), মিন্টু মিয়া (৪০) এবং শরীফের মা বিউটি বেগমকে (৫৫) আটক করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।
সাতক্ষীরার দিনমজুর নূর আলম হাওলাদারের ছেলে রাকিব। বছর তিনেক আগে খুলনায় এসে টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের বস্তিতে উঠেন নূর আলম।
অভাবের কারণে দেড় বছর আগে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে রাকিবকে গ্যারেজের কাজে দিয়েছিলেন নূর আলম।
লাকি বলেন, “গালমন্দ ও কথায় কথায় মারপিটের কারণে কাজ ছেড়ে পিটিআই মোড়ে নাসিরের গ্যারেজে কাজ নেয় রাকিব। এতেই ক্ষুব্ধ হয় মিন্টু মিয়া।”
সে জন্য একটি শিশুকে মেরে ফেলা হবে- এই বিস্ময় এলাকাবাসীর। “কী অপরাধ করেছিল আমার বুকের ধন”- সবার কাছে লাকি এই প্রশ্নের উত্তর চাইলেও উপস্থিত সবাই ছিল নির্বাক।