মার্কিন প্রেসিডেন্টদের পোশাকের কারিগরের মৃত্যু

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের কুখ্যাত আউশউইৎজ ক্যাম্পে এক সেনার শার্ট ছিঁড়ে বেদম মার খাওয়ার অভিজ্ঞতাই পরে তাকে হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত নিয়ে যায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2024, 11:28 AM
Updated : 25 March 2024, 11:28 AM

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, প্রথম সারির অসংখ্য তারকা আর পেশাদার ক্রীড়াবিদের পোশাক যিনি বানাতেন, সেই সুনিপুণ কারিগর মার্টিন গ্রিনফিল্ড মারা গেছেন।

৯৫ বছর বয়সে বুধবার তার মৃত্যু হয়েছে বলে সন্তানদের বরাতে জানিয়েছে বিবিসি।

জীবদ্দশায় ‘আমেরিকার শ্রেষ্ঠ দর্জি’ অভিধা পাওয়া গ্রিনফিল্ড তিন দশক কাজ করেছেন পোশাকের কারখানায়। পরে ১৯৭৭ সালে ব্রুকলিনে গড়ে তোলেন নিজের দোকান ‘মার্টিন গ্রিনফিল্ড ক্লোদিয়ারস’।

এর পরের কয়েক দশকে তার ডিজাইনে তৈরি স্যুট পরেছেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, মার্টিন স্কোরসেজি, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও লেব্রন জেমসের মত বড় বড় তারকারা। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ছয়জন প্রেসিডেন্টের পোশাক তৈরি হয়েছে তার হাতেই।

সিএনএনের মাল্টিমিডিয়া কোম্পানি ‘গ্রেট বিগ স্টোরি’কে ২০১৬ সালে এক সাক্ষাতকারে গ্রিনফিল্ড বলেছিলেন, “আমার কাজের দক্ষতাকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন, কারণ এটা অনেক কিছু্। আমি পোশাকের কারিগর, আমি জানি কীভাবে মাপ নিতে হয়, কীভাবে লোকজনকে ফিট দেখাতে হয়।”

১৯২৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ার পাভালোভো গ্রামে (বর্তমান ইউক্রেইনের অংশ) জন্মেছিলেন মার্টিন গ্রিনফিল্ড। জন্মের পর তার নাম ছিল ম্যাক্সিমিলিয়ান গ্রুনফেল্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ সালে নাৎসি বাহিনী গ্রিনফিল্ড ও তার পরিবারকে পোল্যান্ডের ‘ওশপিয়েনসিম’ শহরে গড়ে তোলা আউশউইৎজ ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

সেখানে বাবা-মা ও ভাইবোন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান গ্রিনফিল্ড। এক বছরের বেশি সময় বন্দিশালায় কাটান। বাবা, মা, দুই বোন ও ভাইয়ের মধ্যে কেবল গ্রিনফিল্ডই একমাত্র বেঁচে ছিলেন। নাৎসিদের কুখ্যাত সেই বন্দিশশালায় কাটানোর অভিজ্ঞতা আর দক্ষতাই পরে তার ক্যারিয়ার গড়ে দেয়।

নিজের স্মৃতিকথা ‘মেজার ফর ম্যান: ফ্রম আউশউইৎজ সারভাইভার টু প্রেসিডেন্ট’স টেইলর’-এ গ্রিনফিল্ড লেখেন, ক্যাম্পে নাৎসি বাহিনীর সদস্যদের পোশাক ধোয়ার দায়িত্ব পড়েছিল তার কাঁধে। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত তার হাতে এক সৈনিকের শার্ট ছিঁড়ে যায়। সে কারণে নির্মমভাবে তাকে মারধর করা হয়।

ওই শার্ট গ্রিনফিল্ড নিজের কাছে রেখে দেন এবং ক্যাম্পের তার এক সঙ্গী তাকে শিখিয়ে দেন কীভাবে শার্টের ছেঁড়া কলার সেলাই করতে হয়।

গ্রিনফিল্ড বলেন, পরে তিনি ওই সেলাই বা মেরামত করা শার্টটি কয়েদির পোশাকের নিচে পরার সিদ্ধান্ত নেন। তার মনে হচ্ছিল, লোকজন ওই শার্টের কারণে তাকে সম্মানই করছিল। ফলে তিনি নিজেকে এতটাই ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করেন যে, তিনি আরেকটি শার্ট ছিঁড়ে ফেলার ঝুঁকি নেন, যাতে তার কাছে দুটি শার্ট থাকে।

স্মৃতিকথায় গ্রিনফিল্ড লেখেন, “আশ্চর্যজনকভাবে, দুটি ছেঁড়া নাৎসি শার্টই এই ইহুদিকে আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সফল হ্যান্ড মেইড স্যুট কোম্পানি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।”

বন্দিশালা থেকে মুক্তির পর ১৯৪৭ সালে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান গ্রিনফিল্ড। নিজের নাম আমেরিকানদের মত শোনাতে ম্যাক্সিমিলিয়ান গ্রুনফেল্ড নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন গ্রিনফিল্ড।

ব্রুকলিনের একটি পোশাক কারখানায় ‘ফ্লোর বয়’ হিসেবে চাকরি পেয়ে যান। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগ পর্যন্ত ব্রুকলিনের ওই কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার পর্যন্ত হতে পেরেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার থেকে শুরু করে পরে জেরাল্ড ফোর্ড, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের পোশাকও তৈরি করেছেন গ্রিনফিল্ড।

নিজের কাজ নিয়ে দক্ষ এই দর্জি লিখে গেছেন, “গ্রিনফিল্ড কখনো কারো স্যুটের অনুলিপি তৈরি করেনি। গ্রিনফিল্ডের বানানো স্যুট দেখেই অন্যরা বানায়।”