মহামারীর মধ্যে কিম জং উনেরও ‘জ্বর হয়েছিল’

দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে সীমান্ত দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমিত লিফলেট পাঠানোরও অভিযোগ করেছেন কিমের বোন ইয়ো জং।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 04:50 AM
Updated : 11 August 2022, 05:18 AM

উত্তর কোরিয়ায় কোভিড প্রাদুর্ভাবের সময় দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উনেরও জ্বর হয়েছিল বলে তার বোন কিম ইয়ো জং জানিয়েছেন।

শনাক্তকরণ উপকরণের ঘাটতি থাকায় উত্তর কোরিয়া ওই প্রাদুর্ভাবের সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা না জানিয়ে কতজনের জ্বর হয়েছে, তা জানাতো। সেই সময়ে উত্তরের শীর্ষ নেতার জ্বর হওয়ার অর্থ তিনিও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসেই আক্রান্ত হয়েছিলেন বলেই মনে হচ্ছে।

কিম ইয়ো জং তার দেশে কোভিডের প্রাদুর্ভাবের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে দায়ী করে বলেছেন, তারা সীমান্ত দিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমিত লিফলেট পাঠিয়েছিল।

দক্ষিণ কোরিয়া এ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

স্বাস্থ্যকর্মী ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে এক সভায় কিম জং উন কোভিডের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার জয়ী হওয়ার ঘোষণা দেন বলে বৃহস্পতিবার কেসিএনএ-র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।

পিয়ংইয়ংয়ের ওই সভাতেই কিম ইয়ো জং ভাইয়ের ‘জ্বর হয়েছিল’ বলে জানান।

কঠোর গোপনীয়তা মেনে চলা দেশটি চলতি বছরের মে মাসে প্রথম উত্তর কোরিয়ায় কোভিডের প্রাদুর্ভাবের কথা জানায়। এরপর থেকে তারা জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জানিয়ে এলেও তাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছেন।

ইয়ো জং তার বক্তব্যে বলেন, সীমান্ত দিয়ে পাঠানো পিয়ংইয়ংবিরোধী লিফলেটের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়াই উত্তর কোরিয়াতে কোভিড ছড়িয়েছে।

দক্ষিণের গণতন্ত্রপন্থি কর্মীরা দশকের পর দশক ধরেই বেলুনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ায় প্রচারণামূলক লিফলেট পাঠিয়ে আসছে, এসব লিফলেটে পিয়ংইয়ংয়ে শাসনকাঠামোর সমালোচনা থাকে, থাকে আন্দোলনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা উচ্ছেদের ডাক। তে গত বছর থেকে লিফলেট পাঠানোর এই চর্চার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

কিম ইয়ো জং এই লিফলেট পাঠানকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে উত্তর কোরিয়া এর বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় পাল্টা প্রতিক্রিয়া’ দেখানোর কথা ভাবছে বলেও জানিয়েছেন।

ভাইয়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যদিও তিনি (কিম জং উন) তীব্র জ্বরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু মহামারীবিরোধী যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জনগণকে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া যাবে সেই কথা ভেবে তিনি এক মুহুর্তের জন্যও শুয়ে থাকতে পারেননি।”

কিম জং উন তার বক্তব্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ‘জাজ্বল্যমান জয়ের’ ঘোষণা দেন। তিনি দেশবাসীর ‘অদম্য দৃঢ়তার’ ভূয়সী প্রশংসা করেন বলেও জানিয়েছে কেসিএনএ।

উত্তরের শীর্ষ নেতা কোভিড মোকাবেলায় দেওয়া নানান বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং প্রাদুর্ভাবে মাত্র ৭৪ মৃত্যুকে ‘বিস্ময়কর’ অভিহিত করেন।

বিবিসি জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া গত ২৯ জুলাইয়ের পর থেকে আর নতুন কারও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানায়নি।

কেসিএনএর’র হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে এপ্রিলের শেষ থেকে শুরু হয়ে মোট ৪৮ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল, তবে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৭৪ জনের। আক্রান্ত অনুপাতে দেশটিতে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ২ শতাংশ দেখা যাচ্ছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অনেক বিশেষজ্ঞরই এই হিসাব মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাদের মতে, উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল, দেশটিতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটের সংখ্যা হাতেগোণা এবং কোভিড চিকিৎসার ওষুধ বা টিকাও নেই।

কোভিড মহামারীর মধ্যে উত্তর কোরিয়া কোনো ধরনের টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেয়নি; এর বদলে তারা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় লকডাউন, ঘরোয়া চিকিৎসা এবং কিমের ভাষায় ‘কোরিয়ান ধাঁচের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধার’ দ্বারস্থ হয়েছিল।