ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে তহবিলের যোগান দেয় যারা

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে শীর্ষ চাঁদা দাতা ও যে রাজনৈতিক দলগুলো অর্থ পেয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2024, 08:52 AM
Updated : 15 March 2024, 08:52 AM

ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে গত পাঁচ বছর ধরে তহবিল যোগানো শীর্ষ দাতাদের মধ্যে বেদান্ত লিমিটেড, ভারতী এয়ারটেল, আরপিএসজি গ্রুপ ও এসেল মাইনিং এর মতো কিছু বৃহত্তম ভারতীয় কোম্পানি রয়েছে।

সোমবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) –কে দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দিতে বলেছিল। সেই নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দেয় এসবিআই।

বৃহস্পতিবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নির্বাচনী বন্ডের ক্রেতা ও যে দলগুলো সেসব বন্ড পেয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকাতেই শীর্ষ চাঁদা দাতাদের মধ্যে ওই কোম্পানিগুলোর নাম এসেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।   

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র মাস দুয়েক আগে এসব তথ্য জনসম্মুখে এসেছে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৭ সালে চালু হওয়া নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দাতার পরিচয় ও অর্থের পরিমাণ গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এসবিআই এই পুরো বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে ছিল।

এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা কোম্পানি স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক বন্ড কিনে সেটি ওই দলকে দিয়ে দেবেন। আর বন্ড ব্যাংকে জমা দিয়ে অর্থ তুলে নেবে রাজনৈতিক দলগুলো। এই প্রক্রিয়া ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলোকে বেনামে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।  

রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দেওয়ার এই পদ্ধতিই নির্বাচনী বন্ড নামে পরিচিত হয়। কিন্তু কারা রাজনৈতিক দলগুলোকে কী পরিমাণ চাঁদা দিচ্ছে তা এই প্রক্রিয়ার কারণে জনগণ জানতে পারছে না আর তাতে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে আদালতে রিট করে ভারতের বিরোধীদলীয় আইনজীবীরা ও একটি সুশীল সমাজ গোষ্ঠী।

এর জবাবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত মাসে নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে এটি নিষিদ্ধ করে।   

রয়টার্স জানিয়েছে, এসব বন্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিল মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) । এ পদ্ধতিতে জানুয়ারি, ২০১৮ থেকে জানুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলো ১৪৫ কোটি ডলার (১২ হাজার কোটি রুপি) অনুদান দিয়েছে। এর ৫৫ শতাংশ পেয়েছে মোদীর বিজেপি। 

চাঁদা দেওয়ার এই প্রক্রিয়াটি বাতিলের সিদ্ধান্ত বিজেপি ও ভারতের অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বিপত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসছে মে-তে ভারতে জাতীয় নির্বাচন শুরু হচ্ছে। তার আগে আদালতের এ সিদ্ধান্তে এ প্রক্রিয়ার সুবিধাভোগী অনেকগুলো রাজনৈতিক দল চাপে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।   

বুধবার এসবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, গত পাঁচ বছরে তারা বিভিন্ন মূল্যের মোট ২২২১৭টি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি করেছে আর ১ এপ্রিল, ২০১৯ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ২২০৩০টি বন্ড ভেঙে অর্থ তুলে নিয়ে গেছে।  

রয়টার্সের সংকলন করা নির্বাচনী বন্ডের শীর্ষ ২০ ক্রেতার মধ্যে শীর্ষে আছে লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং এন্ড হোটেল সার্ভিসেস’। এই সংস্থাটি মোট ১৩৬৮ কোটি রুপি চাঁদা দিয়েছে।  

দ্বিতীয় স্থানে আছে হায়দ্রাবাদভিত্তিক তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা দিয়েছে ৯৬৬ কোটি রুপি। 

এরপরে আছে লজিস্টিক সংস্থা কুইক সাপ্লাই চেইন, প্রাকৃতিক খনিজ কোম্পানি ভেদান্ত ও হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড।

রয়টার্স এ তালিকার শীর্ষ ১০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মেইল পাঠিয়ে মন্তব্য চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনো জবাব দেয়নি।