সমাবেশে উপস্থিত ট্রাম্প সমর্থকরা ছিলেন উৎসবের মেজাজে, যেমনটা তাদের দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময়ও।
Published : 26 Mar 2023, 05:06 PM
গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন ইঙ্গিত দেওয়ার সপ্তাহখানেক পর প্রথম প্রকাশ্যে এসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে তাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাওয়া তদন্ত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
টেক্সাসের ওয়াকোতে একটি বিমানঘাঁটিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে হাজারও সমর্থকের সামনে তিনি একসময়কার পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে তাকে অর্থ প্রদানের অভিযোগে নিউ ইয়র্ক শহরের তদন্তকে বাজে ভাষায় গালাগাল করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
“ওয়াশিংটন ডিসির ‘অবিচার মন্ত্রণালয়ের’ পৃষ্ঠপোষকতা ও নির্দেশনায় নিউ ইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আমার বিরুদ্ধে এমন একটি বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে, যেটি কোনো অপরাধ নয়, অপকর্ম নয়, কোনো শারীরিক সম্পর্কের ঘটনাও নয়,” বলেছেন ট্রাম্প।
নিজেকে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্পাপ মানুষ দাবি করে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ব্যক্তিগত, আর্থিক ও ব্যবসায়িক জীবনকে উল্টে-পাল্টে, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।
কিছুদিন আগেও ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওয়েবসাইটে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে অভিযুক্ত হলে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন, তবে শনিবার টেক্সাসের সমাবেশে তিনি এমন কিছু বলেননি।
এদিন বিকালবেলায় ওয়াকোর সমাবেশে উপস্থিত ট্রাম্প সমর্থকদের বেশ উৎসবের মেজাজেই দেখা গেছে, যেমনটা তাদের দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময়।
হাজারও সমর্থককে দেখা গেছে ট্রাম্পের ছবি ও তাকে কেন্দ্র করে হওয়া বিভিন্ন প্রচার সামগ্রীর তাঁবুগুলোতে ভিড় জমাতে। অনেকেই এসব তাঁবু থেকে ‘ঈশ্বর, বন্দুক আর ট্রাম্প’ এবং ‘ট্রাম্প জিতেছেন’ এমন লেখা টিশার্ট কিনেছেন।
এরপর তারা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জেট নামারও কয়েক ঘণ্টা আগে স্থানীয় বিমানবন্দরটির পিচঢালা পথে বসে থেকে সাবেক প্রেসিডেন্টের জন্য অপেক্ষা করেন। লাউডস্পিকারে উপভোগ করেন আবা, ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা ও বন জোভির গান, এর ফাঁকে ফাঁকে স্লোগানের তালও তাদের উজ্জীবিত রেখেছিল।
ট্রাম্পের জন্য রাখা ওই মঞ্চে ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান ম্যাট গায়েটজ ও জর্জিয়ার কংগ্রেসউইম্যান মারজেরি টেইলর গ্রিনও বক্তব্য রাখেন, আক্রমণ শুনান নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগকে, যিনি সামনের কয়েকদিনের মধ্যেই ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হবে কি হবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
“২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করত আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে বাজেভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে (ট্রাম্পের বিরুদ্ধে) আক্রমণ হচ্ছে। এটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উইচ হান্ট ছাড়া আর কিছুই নয়, তিনি পুরোপুরি নির্দোষ,” বলেছেন গ্রিন।
আয়োজকদের অনুমান, শনিবারের সমাবেশে ১৫ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল; ব্র্যাগের নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাদের বেশিরভাগকেই দুয়ো দিতে দেখা গেছে।
তবে এদিন উপস্থিত ট্রাম্পের অধিকাংশ সমর্থককে নিউ ইয়র্কের তদন্ত নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত মনে হয়নি।
“আমি নেতিবাচক কিছু শুনিই না। তিনি যেন অভিযুক্ত না হন, সেজন্য আমি প্রার্থনা করছি। ঈশ্বর এখনও প্রার্থনা শোনেন,” বলেছেন ডালাসের কাছের শহর মিডলোথিয়ানের বাসিন্দা ডেভি হার্ভি।
“এটা (ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত) নিয়ে বেশি কিছু ভাবার আছে বলে মনে করি না আমি। এখন তারা বিচার আদৌ করা যাবে কিনা, সেটা ভেবেই মনে হয় কুল পাচ্ছে না,” বলেছেন কাছাকাছি কোপেরাস কোভের বাসিন্দা ব্রায়ান নোভি।
হার্ভির মতো নোভি ও তার বন্ধু রিচার্ড টার্নারও এবারই প্রথম ট্রাম্পের সমাবেশে এসেছেন। দুই বন্ধু টিশার্টও কিনেছেন, যাতে লেখা ‘ট্রাম্প টেক্সাসে, আমি সেখানে ছিলাম, তুমি ছিলে কোথায়?’।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেতে আরও অনেকেরই দৌড়ে নামার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু নোভি আর টার্নার বলছেন, তারা ট্রাম্পের সঙ্গেই থাকছেন।
“তিনি যে কিছু করতে পারেন, তা তিনি প্রমাণ করেছেন,” দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিনিধি রন ডিস্যান্টিসকে ইঙ্গিত করে বলেন টার্নার। তার মতে, জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের সক্ষমতা এখনও প্রমাণ করতে পারেননি ফ্লোরিডার গভর্নর।