গতবছর নরওয়েতে বিক্রি হওয়া নতুন ১০ গাড়ির ৯ টিই ছিল ব্যাটারিচালিত। এবছর শতভাগই পরিবেশ বান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির দেশ হওয়ার লক্ষ্য তাদের।
Published : 13 Jan 2025, 07:51 PM
নরওয়ে বিশ্বে প্রথম জ্বালানী তেল ব্যবহৃত গাড়ি ছেড়ে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ির দেশে পরিণত হতে চলেছে।
গতবছর নরওয়েতে বিক্রি হওয়া নতুন ১০ টি গাড়ির ৯ টিই ছিল ব্যাটারিচালিত। আর এবছর নরওয়ে শতভাগই পরিবেশ বান্ধব বৈদুতিক গাড়ির দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে।
অসেলোর সবচেয়ে বড় কার আমদানিকারক কোম্পানি হ্যারাল্ড এ মোল ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভক্সওয়াগন আমদানি করে এসেছে। কিন্তু ২০২৪ সালের শুরুর দিকে তারা জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়িকে বিদায় জানিয়েছে।
এখন দেশটিতে বিক্রির জন্য শোরুমে থাকা যাত্রীবাহী সব গাড়িই বৈদুতিক (ইভি)। নওরয়ের রাজধানীর রাস্তায় ব্যাটারি চালিত গাড়ি এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে। চারপাশে তাকালেই দেখা যাবে, প্রায় প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্স প্লেটেই ইলেকট্রিকের ‘ই’ শব্দটি লেখা রয়েছে।
বিশ্বের অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় ৫৫ লাখ জনসংখ্যার নরডিক দেশ নরওয়ে অনেক দ্রুতই ইলেকট্রিক গাড়িতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। দেশটি এখন বিশ্বে নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ি থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসা প্রথম দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
বিবিসি জানায়, গতবছরই প্রথমবারের মতো নরওয়ের রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা পেট্রোল চালিত গাড়ির সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। আর এর মধ্যে ডিজেল চালিত গাড়ির সংখ্যা ধরা হলে, দেশটির রাস্তায় থাকা মোট গাড়ির প্রায় এক তৃতীয়াংশই হবে ইলেকট্রিক গাড়ি।
নরওয়েজিয়ান রোড ফেডারেশন (ওএফভি) এর হিসাবমতে, গতবছর দেশটিতে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ির ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশই ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি। এ সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৮২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
কোনও কোনও মাসে দেশটিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৯৮ শতাংশ পর্যন্তও। অন্যদিকে, নতুন পেট্রোল ও ডিজেল চালিত গাড়ি বিক্রি প্রায় হয়নি বললেই চলে।
এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে ২০২৪ সালে নতুন গাড়ি নিবন্ধনে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা দেখা গেছে মাত্র ২০ শতাংশ। যদিও এ সংখ্যা ছিল ২০২৩ সালের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে বেশি।
আবার যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির সংখ্যা মাত্র ১৮ শতাংশ। এ সংখ্যাও আগের ৭ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে বেশি।
এদিক থেকে নরওয়েকে বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির অগ্রদূত বলা যায়। তবে দেশটিতে তিন দশক ধরে ঘটেছে এই বৈদ্যুতিক বিপ্লব। নরওয়েজিয়ান ইভি অ্যাশোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “এর সূচনা হয়েছিল ১৯৯০ এর দশকের গোঁড়ার দিকে।”
তিনি জানান, এরপর ধীরে ধীরে পেট্রোল ও ডিজেল ইঞ্জিন চালিত গাড়িগুলোর ওপর কিছু কিছু করে কর আরোপ হতে থাকায় সেগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়েছে। অন্যদিকে, বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর ওপর কোনও কর ছিল না।
নরওয়ে বিশ্বে তেলের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিবেচিত হলেও দেশটি দ্রুততার সঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকেছে।
গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে নরওয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে পেট্রোল এবং ডিজেল চালিত নতুন গাড়ির বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করা।
নরওয়ের উপ-পরিবহনমন্ত্রী ক্রোগলান্ড বলেন, “আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি। আমি মনে করি আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।”