৫ বছর জেল: ইতির দুয়ারে লালু

পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2013, 09:55 AM
Updated : 4 Oct 2013, 01:35 PM

১৭ বছর আগের ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার পর ঝাড়খন্ডের রাঁচির বিশেষ সিবিআই আদালত বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সাজা ঘোষণা করে। একইসঙ্গে তাকে ২৫ লাখ রুপি জরিমানাও করা হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায় অনুযায়ী, দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হওয়ায় সংসদ সদস্য থাকার অযোগ্য হলেন ভারতের বর্ণময় এই রাজনীতিবিদ।

একই কারণে সাজা খাটার পরের ছয় বছর পর্যন্ত নির্বাচনেও দাঁড়াতে পারবেন না রাষ্ট্রীয় জনতা দলের প্রধান লালু, যিনি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র।  

সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে বলে, কোনো এমপি বা এমএলএ কোনো আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে এবং তাকে দুই বা তার বেশি বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সদস্য পদ হারাবেন। জেলে বসেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না৷

৬৬ বছর বয়সী লালুকে গত সোমবার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দিনই রাঁচির বীরসা মুণ্ডা সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। 

বৃহস্পতিবার রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় বাকপটু এই রাজনীতিবিদ বলেন, “আমি কোনো অপরাধ করিনি, আমাকে কীভাবে তারা শাস্তি দেয়!”

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানিয়েছে ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী লালুর পরিবার।

তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পশুখাদ্য কেনার জন্য বরাদ্দ থেকে ৩৭ দশমিক ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে  ১৯৯৬ সালে এই মামলা হয়। লালুপ্রসাদ যাদবসহ মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরুর পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান লালু।

১৭ বছর ধরে মামলা চলার পর আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ভারতের আদালত।

এক সময় রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সমর্থকদের জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল- যব তক সামোসামে রহেগা আলু, তব তক বিহারমে রহেগা লালু। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নের কথাও তিনি বহুবার বলেছেন। কিন্তু এই রায়ের মধ্য দিয়ে এক সময়ের সেই দাপুটে নেতার রাজনৈতিক জীবন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল।

সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী আগামী ৫ বছর সাজা খাটার পর আরো ছয় বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি আর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না, যদি না উচ্চ আদালত তাকে খালাস দেয়।   

লালু যখন দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন, তখনো তার প্রভাব বলয় ভাঙা ছিল দৃশ্যত অসম্ভব। গদি ছাড়ার আগে সেখানে নিজের স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে বসানোর ব্যবস্থা করে যান তিনি।

রেলমন্ত্রী হিসাবে নাটকীয় সব সিদ্ধান্ত নিয়ে, পার্লামেন্টে কবিতার ছত্র আউড়ে, কখনোবা দাম্ভিক উক্তির মাধ্যমে বিতর্ক উস্কে দিয়ে প্রায়ই তিনি দখল করে রাখতেন সংবাদ শিরোনাম।

পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া লালুর রাজনৈতিক জীবনের শুরু ২২ বছর বয়সে, জনতা দলে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে। বিহারের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী সতেন্দ্র নারায়ান সিন্হার সংস্পর্শে আসার পর মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮৯ ভাগলপুর দাঙ্গার পর তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন লালু প্রসাদ যাদব; পরের বছর তিনি প্রথমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে তাকে ১৩৪ দিনের জন্য জেলে কাটাতে হয়। ওই বছরই তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয় এবং জনতা দল থেকে বেরিয়ে তিনি গড়ে তোলেন রাষ্ট্রীয় জনতা দল।

২০০৪ সালে ভারতের রেলমন্ত্রী হওয়ার পর একের পর এক চমকপ্রদ সব প্রকল্প নিয়ে জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করেন তিনি। তবে পরের বছর জনতা দলের নিতিশ কুমারের কাছে বিহারের আসনটি হারিয়ে লালুর পতনের শুরু হয়।

২০০৫ সালে পশুখাদ্য ছাড়াও বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারিতে লালুর নাম জড়িয়ে গেলে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ভরাডুবি হয়। এরপর আর সেই জেল্লা  ফিরে পাননি বিহারের এক সময়ের ‘ত্রাতা’ লালু প্রসাদ যাদব।