দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরার ঘোষণা জনসনের, তবে প্রধানমন্ত্রী থাকছেন

দলের ভেতরে বিদ্রোহ, একের পর এক মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতার পদত্যাগের মধ্যে অনিবার্য পরিণতি মেনে নিয়ে শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2022, 11:56 AM
Updated : 7 July 2022, 02:19 PM

বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে জনসন তার পদত্যাগের ভাষণে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্বও হারাচ্ছেন তিনি।

তবে জনসন বলেছেন, কনজারভেটিভরা নতুন নেতা ঠিক করার আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনসন নতুন একটি মন্ত্রিসভাও নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

আর এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার সময় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের ইচ্ছাটা পরিষ্কার। একজন নতুন নেতা হওয়া দরকার- এটি “স্পষ্টতই এখন কনজারভেটিভ এমপিদের ইচ্ছা।”

এই নতুন নেতা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া এখনই শুরু হওয়া উচিত এবং এর সময়সীমা আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে বলে জানান জনসন। এ প্রক্রিয়ায় লেগে যেতে পারে কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসও।

জনসন বলেন, রাজনীতিতে আদৌ কেউই অপরিহার্য নয়। আমাদের চমৎকার ব্যবস্থায় আরেকজন নেতা তৈরি হয়ে যাবেন। নতুন নেতাকে যতটা সম্ভব সমর্থন করার আশ্বাস দেন তিনি।

জনসন এই বিবৃতি দেওয়ার সময় তার পদত্যাগের ঐতিহাসিক ঘোষণা শুনতে ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে সমবেত হয় জনতা।

ভাষণে জনসন তাকে প্রধানমন্ত্রিত্বের বিপুল সম্মানে ভূষিত করার জন্য ব্রিটিশ জনগণকে ধন্যবাদ দিয়েছেন এবং বলেছেন, এখন থেকে নতুন নেতা ক্ষমতায় আসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত জনগণের সেবা করে যাবেন তিনি।

তবে কনজারভেটিভ পার্টির আরও বেশিসংখ্যক এমপি এখন বলছেন, নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া পর্যন্তও অপেক্ষা করে না থেকে জনসনের এক্ষুনি বিদায় নেওয়া উচিত।

 বিরোধীদল লেবার পার্র্টি বলছে, জনসন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে থেকে যেতে পারেন না। থাকলে তারা পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনতে চেষ্টা করবেন।

অনেকেই বলছেন, জনসন নিজ দলে আস্থা হারানোয় তার উচিত এক্ষুনি তার উপপ্রধান ডমিনিক রাবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

লেবার নেতা কির স্টারমার বলেছেন, কনজাভেটিভ পার্র্টি এ মুহুর্তেই জনসনকে না সরালে তিনি পার্লামেন্টে আস্থা ভোট ডাকবেন। ‘মাসের পর মাস এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বসে থাকা যায় না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আগামী অক্টোবরে দলীয় সম্মেলনে দায়িত্ব নেওয়া নতুন নেতারই প্রধানমন্ত্রী পদে জনসনের স্থলাভিষিক্ত হওযার কথা রয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে পরিচালিত ইউগভ জরিপে দেখা গেছে, জনসনের উত্তরসূরি হিসাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসকেই পছন্দ করছেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা। এরপর তালিকায় আছেন, জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মোরডান্ট এবং সাবেক অর্র্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, দলে বিদ্রোহীদের পাশাপাশি নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীরাও জনসনকে ছেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলে তার সরকার অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এ পরিস্থিতিতে পদত্যাগ ছাড়া অন্য কোনো পথ জনসনের জন্য খোলা ছিল না।

 নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে এতদিন দেরি হল কেন সে ব্যাখ্যায় জনসন বলেছেন, ভোটাররা যে বিপুল রায় দিয়ে তাকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছিল, তাদেরকে সেবা দিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। নেতৃত্বে থেকে কাজ করে যাওয়া এবং ভোটারদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করাকে তিনি তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলে মনে করেছেন।

কিন্তু জনসন নিজ দলেই কতটা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলেন, তা কেবল বৃহস্পতিবার সকালের দুই ঘণ্টায় ৮ মন্ত্রীর পদত্যাগেই বোঝা গেছে। অথচ আগের দিনও পার্লামেন্টে তিনি বলেছিলেন, পদত্যাগ তিনি করবেন না।

দলে কয়েকদিনের টানাপোড়েনের পর ৫৮ বছর বয়সী জনসনের পাশে এখন হাতেগোণা মাত্র কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে; অথচ তিন বছর আগেই তিনি বিপুল ব্যবধানে টোরিদের ক্ষমতায় এনেছিলেন, যুক্তরাজ্যের এমন অনেক এলাকাকে কনজারভেটিভদের পক্ষে নিয়ে এসেছিলেন, যেসব এলাকা ঐতিহাসিকভাবে কখনোই তাদের পক্ষে ছিল না।

তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লকডাউনের মধ্যে বিধিনিষেধ অমান্য করে মদের পার্টি কেলেঙ্কারিসহ নানান ইস্যুতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জনসন সরকারের জনপ্রিয়তা যে হু হু করে নামছিল বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে হার তারই সাক্ষী দিচ্ছে।

দলে একদফা বিদ্রোহ সামাল দিতে পেরেছিলেন তিনি, আস্থা ভোটে টিকে নেতৃত্বের পরীক্ষায়ে উৎরে গিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার ঋষি সুনাক ও সাজিদ জাভিদের পদত্যাগ যে ঝড়ের সূচনা করে, তাতে তার টিকে থাকা সত্যিই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল।

এমনকী বুধবার অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নাদিম জাহাউই-ও একদিনের মাথায় জনসনের কাছ থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেন।

জনসন দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় এখন কনজারভেটিভ পার্টিতে নেতৃত্বের লড়াই শুরু হবে; এরপর দলটির এক লাখ সদস্যের সিদ্ধান্তে নতুন নেতা ঠিক হবে।

তখন জনসন তার পদত্যাগপত্র রানিকে দিলে এলিজাবেথ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকে ডেকে পাঠাবেন, যিনি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন, গড়বেন নতুন সরকার।