বিশ্বজুড়ে ব্যাহত শস্য উৎপাদন, সহসাই কমছে না খাবারের দাম

ইউক্রেইনে যুদ্ধ থেকে শুরু করে খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিশ্বে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে খাবারের উচ্চমূল্য বিরাজ করারই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

>>রয়টার্স
Published : 28 June 2022, 01:46 PM
Updated : 28 June 2022, 01:46 PM

উত্তর আমেরিকা বিশ্বে বাণিজ্যিক শস্য চাষের বড় ধরনের ক্ষেত্র। সবচেয়ে বড় কৃষি এলাকা কানাডার আলবার্তা থেকে শুরু করে ম্যানিটোবা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপশ্চিমাঞ্চলীয় নর্থ ডাকোটা পর্যন্ত।

সেই নর্থ ডাকোটাতেই এবছর পরিকল্পনামাফিক শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। কৃষকের পরিকল্পনা ছিল প্রায় ৫ হাজার একর জমিতে শস্য ফলানোর। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা কমে হয়েছে ৩,৫০০।

যা পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তার প্রায় এক চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশি শস্য এবছর আর নর্থ ডাকোটায় বপন করা হচ্ছে না।

 শস্য উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই যখন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন ‍যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে বিশ্বের একক বৃহত্তম শস্যদানা উৎপাদনে বিঘ্ন সে দুর্দশায় আরেক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্বের আরেকটি প্রধান শস্য রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ায় গম, সয়াবিনসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যর দাম বৃদ্ধি এবছরের শুরুতেই রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে।

খারাপ আবহাওয়ার কারণে চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলেও এবছর শস্য উৎপাদন কম হয়েছে। সার স্বল্পতার কারণেও বিশ্বজুড়ে শস্যচাষ ব্যাহত হচ্ছে।

বিশ্বে একের পর এক এমনভাবে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হতে সম্ভবত এর আগে কখনওই দেখা যায়নি- বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলেছেন কৃষি, শিল্প বিশ্লেষকরা থেকে শুরু করে কৃষক এবং অর্থনীতিবিদরাও।

তার মানে, বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা ফিরে আসতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।

সার উৎপাদক কোম্পানি নিউট্রেইন লিমিটেড, এনটিআর.টিও’র প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাসন নিউটন বলেন, “সাধারণত চাহিদা-জোগানে টানাটানি অবস্থা থাকলে একটি ফসল উৎপাদনের মৌসুমেই তা কাটিয়ে ওঠা যায়।”

“কিন্তু আজ আমরা যেখানে আছি, আর বেশি বেশি শস্য উৎপাদনের পরিকল্পনা যেভাবে বাধার মুখে পড়ছে, উপরন্তু ইউক্রেইনে ‍যুদ্ধ যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে… তাতে বর্তমান অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে।”

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহে বলেছেন, বিশ্ব এক নজিরবিহীন ক্ষুধা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এতে এ বছর কয়েকটি দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে এবং ২০২৩ সালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

উত্তর আমেরিকায় শস্য উৎপাদনের আগে ম্যানিটোবা থেকে ইন্ডিয়ানা পর্যন্ত বীজ বপনে দেরি হওয়ায় শস্য উৎপাদন কম হওয়া নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্বে ২০২০ সালে কোভিড শুরুর সময় থেকেই পরিবহনের সমস্যার কারণে শস্য সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এবছর শস্য উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে।