দ্বিতীয় দফায় অভিশংসিত ট্রাম্প, এরপর কী?

কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিদায় করতে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব পাস করেছেন আইনপ্রণেতারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2021, 01:08 PM
Updated : 14 Jan 2021, 07:43 PM

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আনা প্রস্তাবে বুধবারের ভোটে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিরও অনেকে সমর্থন দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুই বার অভিশংসিত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট।

বিদ্রোহ উস্কে দেওয়ার অভিযোগে অভিশংসিত হয়েছেন ট্রাম্প। এরপর কি ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় আছে বিশ্ব। কংগ্রেসে আরও যা যা ঘটতে পারে তার সবিস্তার বর্ণনা তুলে ধরেছে রয়টার্স:

অভিশংসন প্রক্রিয়া কি শেষ?

না। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কিংবা অভিশংসন প্রস্তাব (আর্টিকেল অব ইমপিচমেন্ট) এনে তাকে অভিশংসিত করেছে।

এরপরের বড় পদক্ষেপ হচ্ছে, কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটে ট্রাম্প দোষী কিনা তা নির্ধারণ করতে বিচারপ্রক্রিয়া চালানো।

ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন পড়বে। সেনেটে মোট সদস্য সংখ্যা ১০০। যদি ভোটের দিন তারা সবাই উপস্থিত থাকেন, তাহলে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে কমপক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকানের ভোট প্রয়োজন হবে ডেমোক্র্যাটদের।

সেনেটে বিচার কখন শুরু হবে?

অভিশংসন প্রস্তাবের ভিত্তিতে অবিলম্বে বিচার শুরুর জন্য ডেমোক্র্যাটদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন সেনেটের রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককলেন।

তিনি বলেছেন, ছুটি শেষে ১৯ জানুয়ারিতে সেনেট অধিবেশন বসবে। তার আগে বিচার শুরু করা যাবে না। তার মানে, ২০ জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়াদ শেষের পর সেনেটে এই বিচার শুরু হতে পারে।

তবে বিচার শুরুর আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে সেনেটের কাছে হস্তান্তর করতে হবে হাউজ বা প্রতিনিধি পরিষদকে।

সেনেটের বিচারে আত্মপক্ষ সমর্থনে ট্রাম্প কী বলবেন?

গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিজয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার দিনে বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে নজিরবিহীন হামলা চালালে পাঁচজন নিহত হয়।

হামলার ঠিক আগেই ট্রাম্প তার সমর্থকদের উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে উগ্রতার প্ররোচনা ছিল বলে সব মহল থেকে সমালোচনা ওঠে। রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতাও এর সমালোচনা করেন।

ট্রাম্পের ওই ভাষণের সূত্র ধরেই প্রতিনিধি পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে একটিমাত্র আর্টিকেল অব ইমপিচমেন্ট- আনুষ্ঠানিক অভিযোগ- অনুমোদন করেছে। আর তা হল, ‘বিদ্রোহে উস্কানি’ দেওয়া।

তবে সেনেটের বিচারে ট্রাম্প আত্মপক্ষ সমর্থনে একথা বলতে পারেন যে, তার বাক স্বাধীনতা আছে; যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতেই সে অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে। তাছাড়া, তিনি তার বক্তব্যে সমর্থকদের ‘লড়াই’ করার আহ্বান জানালেও আক্ষরিক অর্থে তা সহিংসতায় নামার ডাক ছিল না বা এমন কোনও অভিপ্রায়ও তার ছিল না।

বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের পর ট্রাম্প একটি ভিডিওটেপ প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি গত সপ্তাহের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা, ভাঙচুরের কোনও স্থান একেবারেই নেই। আমাদের আন্দোলনেও এর কোনও স্থান নেই।”

একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করা যায়?

হ্যাঁ। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একবাক্যেই বলছেন, ‘লেট ইমপিচমেন্ট’ সংবিধানসম্মত। অর্থাৎ, একজন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা শেষের পরও তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া চালানো যায়।

বিশেষজ্ঞদের কথায়, অভিশংসন শুধু কর্মকর্তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই করা হয় না। একইসঙ্গে তাদেরকে ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট পদ বা সরকারি কোনও পদে অযোগ্য ঘোষণার জন্যও করা হয়।

এর মানে হল, ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পরও তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর যুক্তি আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা হয়েছে, কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়ে শাস্তি পেলে তিনি সম্মানজনক, আস্থাশীল কিংবা লাভজনক কোনও পদে আসীন হওয়ার অযোগ্য হয়ে যান।

সেনেটের নিয়মে ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করতে কেবল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রয়োজন। এমন ভোট সাধারণত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দোষ নির্ধারণ হওয়ার পর। তবে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করতে তাকে দোষী সাব্যস্ত হতেই হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

বিচার কতদিন চলবে?

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বলছে, অভিশংসন প্রক্রিয়া কিভাবে পরিচালনা করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তৃত পরিসরে নিজস্ব আইন ঠিক করে নেওয়ার এখতিয়ার সেনেটের আছে। তবে বর্তমানে অল্প কয়েকদিনে বিচার করার নিয়ম চালু আছে। সেটি হতে পারে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহও।

সিএনএন জানায়, ১৮৬৮ সালে এন্ডু জনসনের অভিশংসনের সময় সেনেটে প্রথম নিয়ম কানুন ঠিক করা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে তা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়।

নিয়মানুযায়ী, হাউজকে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেয় সেনেট। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে সেনেটরদেরকে শপথ নিতে হয়।

সেনেটের সামনে অভিশংসনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার জন্য ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার নিয়োগ করতে হয় হাউজকে। সেনেটররা সেক্ষেত্রে জুরির ভূমিকায় থাকেন। প্রেসিডেন্ট আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। আর বিচার প্রক্রিয়া তদারক করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।

কিন্তু সামনের দিনগুলোতে অভিশংসনের বিচার কিভাবে চলবে এবং কতদিন চলবে সে ধারণা এখনই পাওয়া মুশকিল। কারণ, এসব বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

তাছাড়া, আগামী কয়েকদিনে বদলে যাবে দৃশ্যপটও। ক্ষমতায় আসবেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনেটের নিয়ন্ত্রণও চলে যাবে ডেমোক্র্যাটদের হাতে।

ফলে গত চার বছরে সেখানে কাজের যে ধারা ছিল তা হয়ত আর তেমন থাকবে না। আর তাই তখন ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারে এই পরিবর্তনের কী প্রভাব পড়ে সেটিই এখন দেখার বিষয়।