ট্রাম্পকে ছাপিয়ে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী ‘লড়াকু’ জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের নির্বাচনে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেই রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ছাপিয়ে ভোটারদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে উঠেছেন ‘লড়াকু’ ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন; যিনি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি, বার বার ব্যর্থতার পরও উঠে এসেছেন রাজনীতির কেন্দ্রে।

শামীমা নাসরিন লাকিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2020, 10:11 AM
Updated : 26 Oct 2020, 11:42 AM

নির্বাচনের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এসেও ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এবং নিউ ইয়র্কের একটি লিবারেল আর্টস কলেজ পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন।

গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেশি সমর্থন পেয়েছেন বাইডেন। আবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভোটাররা ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনেই বেশি আস্থা রাখছেন। এক্ষেত্রে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৬ পয়েন্টে।

তাছাড়া, দেশকে একতাবদ্ধ রাখার প্রশ্নেও আমেরিকানরা বাইডেনকে বেশি যোগ্য মনে করছেন। এক্ষেত্রে প্রায় ২০ পয়েন্ট বেশি সমর্থন আছে বাইডেনের ঝুলিতে।

সব মিলিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হয়ে উঠেছেন ‘সবচেয়ে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।”

অথচ ব্যক্তিগত জীবনে ট্রাজেডির কারণে ডেলাওয়ারের সাবেক এই সিনেটর একাধিকবার রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। হোয়াইট হাউজের দৌড়েও বাইডেন এবারই প্রথম নন। বরং আরও দুইবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

 কিন্তু হাল ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতা তাকে বার বার যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এবারের নির্বাচনে জয় পেলে ওবামা আমলে দীর্ঘ আট বছর ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জো বাইডেনই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।

‘যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভাইস-প্রেসিডেন্ট’:

জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভাইস প্রেসিডেন্টের তকমা দিয়েছিলেন বারাক ওবামা।

২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নেমেছিলেন বাইডেন। কিন্তু সেবার ওবামার কাছে হেরে যান তিনি।

পরে তিনি ওবামার রানিংমেট হন এবং আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ওই আট বছরে নানা নীতি নির্ধারণীতে দৃঢ়ভাবে প্রেসিডেন্ট ওবামার পাশে থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে গেছেন বাইডেন।

তার সেই ভূমিকার কথা বলতে গিয়েই ওবামা বলেছিলেন, “তিনি (বাইডেন) এখন পর্যন্ত পাওয়া আমেরিকার সেরা ভাইস প্রেসিডেন্ট।” ওবামা সবসময় ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন বাইডেনকে।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থান করায় বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে বাইডেনের ধারণা খুব স্পষ্ট। তাই রাজনীতিতে ওবামার যেটুকু অনভিজ্ঞতা ছিল তা তিনি খুব সহজেই পূরণ করতে পেরেছিলেন।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জো বাইডেন ‘মিডল ক্লাস জো’ নামেও পরিচিত। তার এ পরিচয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্লু-কলার’শেতাঙ্গ ভোটারদের দলে টেনেছিল, ওবামার জয়ে যাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের ‘ব্লু-কলার’ বলা হয়।

রাজনৈতিক জীবন:

ডেলাওয়ার থেকে টানা ছয় মেয়াদে সিনেটর নির্বাচিত হওয়া জো বাইডেন ১৯৭২ সালে প্রথম বার নির্বাচিত হন। অনেকদিন ধরেই ওই আসনে থাকা রিপাবলিকান সিনেটার জেমস কেইলব বোগসকে হারিয়ে ৩০ বছরের বাইডেন রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।

 অথচ, সেবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভরাডুবি হয়েছিল। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর।

১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তিনি প্রথমবার প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালের ৯ জুন ওই ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলে তিনি তরতর করে এগিয়েও যাচ্ছিলেন।

কিন্তু তিন মাসের মাথায় বক্তৃতা চুরি করার কেলেঙ্কারি স্বীকার করে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।

বাইডেন আইওয়ায় এক সমাবেশে সমাপনী বক্তৃতায় যে কথাগুলো বলেছিলেন, তা ছিল যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা নিল কিনকের একটি ভাষণের হুবহু কপি। কিনক নিজের শ্রমিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠা নিয়ে যা বলেছিলেন, তার প্রায় হুবহু বলে যান বাইডেন।

আগের এক ভাষণে একই কথা বলার সময় তিনি কিনকের নাম নিলেও আইওয়ার সভায় তা চেপে যান। সে সময় তারই এক ডেমোক্র্যাটিক প্রতিপক্ষ বিষয়টি সামনে আনেন।

এই অভিযোগের সূত্র ধরে বাইডেনের ছাত্রজীবনের একটি ঘটনা সামনে নিয়ে আসা হয়। আইনের ছাত্র হিসাবে বাইডেন তার ‘সাইটেশন’ পেপারে অন্য একজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তিনি অবশ্য তখন বলেছিলেন, এটা যে নিয়ম বহির্ভূত তা তিনি জানতেন না।

কিন্তু আবারও একই কাণ্ড করায় বাইডেনের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সামনে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন বাইডেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ট্র্যাজেডি:

১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় বাইডেনের স্ত্রী নেইলিয়া হান্টার ও তার শিশুকন্যা নাওমি মারা যান। গাড়িতে থাকা তার দুই ছেলে বোও এবং হান্টার গুরুতর আহত হন।

নেইলিয়া সন্তানদের নিয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে বড়দিনের উৎসবের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে একটি লরি তার গাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে সিনেটর নির্বাচিত হওয়া বাইডেন ওই সময় কংগ্রেসে তার কার্যালয়ে কর্মী নিয়োগের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন। তার শপথ অনুষ্ঠান পর্যন্ত হয়নি।

১৯৭৩ সালের ৫ জানুয়ারি হাসপাতালে ছেলের কক্ষে দাঁড়িয়ে সিনেটর হিসেবে শপথ নেন বাইডেন। শপথ অনুষ্ঠানের ছবিতে দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যাওয়া ছোট্ট বোওকে পায়ে ট্রাকশন দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।

সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে বাইডেন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন। নিজের স্মৃতিকথায় তিনি লেখেন, "আমি কথা বলতে পারতাম না, বুকের ভেতরে একটা বিশাল শূন্যতা অনুভব করতাম, মনে হত একটা কালো গহ্বর আমাকে ভেতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।"

প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের কথা মনে রেখে এখনও ১৮ ডিসেম্বর বাড়িতে থাকেন বাইডেন। ওই দুর্ঘটনার পর তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন।

ঠিক করেছিলেন যাজক হবেন, দুই ছেলেকে মানুষ করবেন। তিনি লিখেছেন, যেসব এলাকায় খুব মারামারি হতো সেসব এলাকায় তিনি সন্ধ্যার পর ঘুরে বেড়াতেন। তার খুব মারপিট করতে ইচ্ছা হত।

"আমার ভেতরে একটা ভয়ঙ্কর ক্রোধের জন্ম হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আমার সাথে নিষ্ঠু খেলা খেলছেন। আমার প্রচণ্ড রাগ হত।"

প্রায় পাঁচ বছর একাই দুই ছেলের লালন-পালন করেন বাইডেন। ১৯৭৫ সালে জিল ট্রেসি জ্যাকবসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। শিক্ষক হিসেবে ডেলাওয়ারে এসেছিলেন জিল। ১৯৭৭ সালের ১৭ জুন তারা বিয়ে করেন।

বাইডেনকে আরও একবার সন্তানের মৃত্যুশোক পোহাতে হয়েছে। তার বড় ছেলে বোও বাইডেন ২০১৫ সালে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে ভুগে মারা যান। ৪৬ বছরের বোও ডেলাওয়ারের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উঠতি রাজনীতিকদের একজন বলে বিবেচিত হতেন। ২০১৬ সালে তার ডেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচন করার কথা ছিল।

বোওর মৃত্যুতে আবারও ভেঙে পড়েন বাইডেন। আত্মজীবনীতে এ প্রসঙ্গে বাইডেন লিখেছেন, ওই বছর তিনি ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণার তোড়জোড় করছিলেন। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পর তিনি সিদ্ধান্ত বদলান।

"মানসিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহ পাওয়া নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। আগের অভিজ্ঞতায় দেখেছি শোক এমন একটি মানসিক চাপ, যা কোনও সময় বা কাজের তোয়াক্কা করে না।”

জন্ম ও কৈশর :

১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জন্ম নেওয়া বাইডেন পেনসিলভানিয়ার ‘ব্লু-কলার’ নগরী স্ক্রান্টনে বেড়ে উঠেন। তার বাবা জোসেফ বাইডেন সিনিয়র চুল্লি পরিষ্কার করার কাজ এবং সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ি বিক্রি করতেন।

শৈশবে বাইডেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ‘তোতলামি’ কাটিয়ে উঠা। ছোটবেলায় তোতলামির জন্য তাকে ‘ড্যাশ’ এবং ‘জো ইমপেডিমেন্টা’ বলে খ্যাপানো হতো।

"এখনও আমার মনে আছে সেই যন্ত্রণার কথা, লজ্জা রাগ আর অপমানের দিনগুলোর কথা," নিজের স্মৃতিকথায় লিখেছেন বাইডেন।

তিনি কবিতার লম্বা লম্বা প্যারা মুখস্ত করে এবং আয়নার সামনে শান্তভাবে জোরে জোরে তা পাঠ করে তোতলামির সমস্যা কাটিয়ে উঠেন।

স্ক্রান্টনের সেন্ট পলস এলিমেটারি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন বাইডেন। ১৯৫৫ সালে বাইডেনের বয়স যখন ১৩ বছর তখন তার পরিবার ডেলাওয়ারের মাইফিল্ডে চলে যায়।

অভিজাত আর্চমেয়ার অ্যাকাডেমিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার আগে তিনি সেন্ট হেলেনা স্কুলে লেখাপড়া করতেন। নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে তিনি শৈশবেই স্কুলের জানালা পরিষ্কার এবং বাগানের আগাছা তোলার কাজ করতেন। তার স্বপ্ন ছিল আর্চমেয়ার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়া। পরে তিনি নিজেই বহু বার এ কথা বলেছেন।

লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলাতেও দক্ষ ছিলেন বাইডেন। আর্চমেয়ার অ্যাকাডেমির ফুটবল কোচ ছাত্র বাইডেনের সম্পর্কে বলেন, ‘‘সে খুবই হাল্কাপাতলা গড়েনের ছিল। কিন্তু আমার ১৬ বছরের কোচ জীবন সে সব থেকে ভাল ‘পাস রিসিভার’ ছিল।” ১৯৬১ সালে আর্চমেয়ার অ্যাকাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন বাইডেন।

কলেজ, বিয়ে, আইনপাঠ:

ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন বাইডেন, সঙ্গে ফুটবল খেলাও চলছিল। সেখানে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ জন্মায় তার।

এক বসন্তের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাহামায় বেড়াতে যান বাইডেন। সেখানেই সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নেইলিয়া হান্টারের সঙ্গে দেখা। প্রথম দেখাতেই ভালোলাগা।

 আর তাতেই অনুপ্রাণিত হয়ে লেখাপড়ায় আরো জোর দিয়ে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর শেষে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি ল স্কুলে ভর্তি হন বাইডেন। পরের বছর বাইডেন ও হান্টার বিয়ে করেন।

বাইডেনের রাজনৈতিক অবস্থান:

নির্বাচনে জয়ী হলে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের কিছু নীতি পাল্টে সেখানে ওবামার আমলের নীতি ফেরত আনার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। যার অন্যতম ‘ড্রিমার্স’ সুরক্ষা নীতি।

শিশু বয়সে বাবা-মার সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ব্যক্তিদের ‘ড্রিমার্স’ বলা হয়। তাদের সুরক্ষায় ওবামা যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন বাইডেন সেই নীতি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া ট্রাম্প আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন কমিয়ে ফেলার যে নীতি গ্রহণ করেছেন বাইডেন তা প্রত্যাহার করা এবং মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোতে আরোপ করা ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথাও বলেছেন।

ওবামার অ্যাফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট-এসিটি নিয়ে আলোচনার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন বাইডেন। ওবামার আমলে চালু হওয়া এই স্বাস্থ্যবীমা ‘ওবামাকেয়ার’ নামেও পরিচিত। যেটি বন্ধ করতে একাধিক দফায় চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। এই স্বাস্থ্যবীমার আওতা আরও বাড়াতে চান বাইডেন। তিনি ৯৭% আমেরিকানকে এই বীমার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন।

বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বাইডেন সবার আগে জাতীয় নানা বিষয়ে মনযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি নেটো এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের আমলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ বেড়েছে।

চীনের বিষয়ে বাইডেনের নীতিতেও বেইজিংয়ের জন্য খুব একটা আশা জাগানিয়া কিছু নেই। বাইডেন চীনের বিষয়ে বলেছেন, চীনকে অবশ্যই পরিবেশ ও বাণ্যিজ্য নিয়ে তাদের অন্যায্য আচরণের জবাবদিহি করতে হবে।

তবে এজন্য তিনি একতরফা শুল্ক আরোপ না করে বরং অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যাতে তারা যে ব্যবস্থাই গ্রহণ করুন চীন তা ‘অগ্রাহ্য করতে না পারে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনকে বাস্তব হুমকি বলেছেন। নির্বাচনে জিতলে তিনি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অংশ করবেন এবং বাকি বিশ্বের সঙ্গে মিলে যত দ্রুত সম্ভব কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে কাজ করবেন।

বাইডেন এ ধরনের আরও বেশ কিছু বিষয়ে ওবামা আমলের নীতি ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। কারণ, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার আমলে গ্রহণ করা নানা নীতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল।

প্রসঙ্গ ইউক্রেইন:

জো বাইডেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তার ছেলে হান্টার বাবার প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। হান্টার একসময় ইউক্রেইনের এনার্জি ফার্ম ‘বুরিসমা’র পরিচালক বোর্ডে ছিলেন।

ট্রাম্পের অভিযোগ, হান্টারের ব্যবসায় সুবিধা করে দেওয়ার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বাইডেন ইউক্রেইনের একজন প্রসিকিউটরকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নিজের প্রভাব খাটিয়েছিলেন।

এছাড়া, হান্টারের স্বার্থে ওবামা প্রশাসন ইউক্রেইনের বিষয়ে নিজেদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন ট্রাম্প। গোপন ফোনালাপে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টকে হান্টারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত পুনরায় চালু করতে চাপও দিয়েছিলেন তিনি।

ওই ফোনালাপ প্রকাশের পর ট্রাম্পকে রীতিমত অভিশংসনের মুখে পড়তে হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত সে যাত্রায় রক্ষা পান তিনি।

রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরে প্রকাশ করা এক তদন্ত প্রতিবেদনে হান্টারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে কোনও প্রভাব পড়ার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়।

জো বাইডেনের নির্বাচনী শিবির অবশ্য ওই তদন্তকে ‘বাইডেনকে খাটো করা এবং করোনাভাইরাস সঙ্কট থেকে জনগণেরি দৃষ্টি ফেরানোর অপচেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছে। 

তথ্যসূত্র;  (বিবিসি, রয়টার্স, বায়োগ্রাফি, উইকিপিডিয়া)