বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০ জুলাই কিউবায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। দেশটিতে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সেদিনই প্রথমবারের মতো কোনো কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এর আগের দুইদিনও মাত্র একজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পেয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টিশাসিত এ রাষ্ট্রটি।
জুলাইয়ের প্রথম তিন সপ্তাহে ১০ বা তার বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল কেবল দুইদিন। কিন্তু শেষ সপ্তাহে দেখা গেছে এ চিত্রের একেবারে বিপরীত রূপ।
২৭ জুলাই দেশটিতে ৩৭ নতুন রোগী শনাক্ত হয়; বুধবার মেলে আরও ৩৩জন।
বৃহস্পতিবার আরও ৯ নতুন আক্রান্তের কথা জানিয়ে দেশটির শীর্ষ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিসকো দুরান তার ব্রিফিংয়ে কিউবানদের কোভিড-১৯ থেকে আগেভাগে ‘নজর সরিয়ে নেওয়ার’ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
সংক্রমণ মোকাবেলায় সতর্ক থাকতে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তা ঠিকঠাক মেনে না চলায় কিউবার বেশ কিছু অঞ্চলে সংক্রমণ বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
“দূরত্বের নির্দেশনা না মেনে, কোথাও কোথাও এমনকী মাস্ক না পরেই লোকজন নানান ধরনের জমায়েত করছে.” তূীব্র বিরক্তি নিয়ে বলেছেন দুরান।
অথচ কয়েক সপ্তাহ আগেও বিশ্বের যে কয়েকটি দেশকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ‘মডেল’ বিবেচনা করা হচ্ছিল, কিউবা ছিল তার অন্যতম।
লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা এখনও অনেক কম।
বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, বাসিন্দা অনুপাতে চিকিৎসক-নার্সের সংখ্যা, বিস্তৃত আকারে করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা, রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা, কঠোর আইসোলেশন এবং ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার কারণেই কমিউনিস্ট পার্টিশাসিত দেশটি মহামারী মোকাবেলায় অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরাও।
শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে মাত্র দুই হাজার ৫৯৭ জনের দেহে প্রাণঘাতী ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, মৃত্যু হয়েছে ৮৭ জনের।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকায় গত ছয় সপ্তাহ ধরে কিউবার কর্তৃপক্ষ জারি রাখা বিধিনিষেধগুলো একে একে শিথিল করতে থাকে। রেস্তোরাঁ, বার, পুল, হোটেল ও সমুদ্রসৈকতগুলো খুলে দেওয়া হয়; কম যাত্রী ও কঠোর পরিচ্ছন্নতার নির্দেশনা মেনে গণপরিবহন চালুরও অনুমতি দেওয়া হয়।
কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিলের পর থেকে কিউবার অনেক বাসিন্দাকেই সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ও অন্যান্য স্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলো ঠিকঠাক মানতে দেখা যাচ্ছে না বলে দুরান অভিযোগ করেছেন। করোনাভাইরাস শেষ হয়ে গেছে ভেবে সতর্কতায় তাদের ‘গা ছাড়া ভাব’ নতুন করে বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে সাবধানও করেছেন তিনি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি হাভানার দক্ষিণ পশ্চিমের শহর বৌতায় আফ্রো-কিউবান সান্তেরিয়া ধর্মের অনুসারীরা জড়ো হয়েছিলেন; ওই জমায়েতে একত্রিত হওয়া অনেকের দেহে এখন প্রাণঘাতী ভাইরাসের উপস্থিত ধরা পড়ছে।
“সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির প্রতিটি ছোট ছোট চূড়ার পেছনে শৃঙ্খলার ঘাটতি আছে, যে কারণে ফের কঠোর বিধিনিষেধ দিতে হচ্ছে,” বলেছেন দুরান।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বৌতা শহরে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, শহরটির বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় একটি বাড়ির একজনের বেশি বাসিন্দাকে দোকানে বা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে অনুমতি না দিতে বলা হয়েছে।
গত কয়েকদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে বিদেশ থেকে কিউবায় আসা কয়েকজনও আছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।