সৌদি জোটের ৫০০ সেনাকে হতাহতের দাবি হুতিদের

সীমান্তে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর ওপর বড় ধরনের হামলা চালিয়ে ৫০০ সেনাকে হতাহত, প্রায় দুই হাজার সেনাকে আটক এবং তাদের সামরিক যানগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করার পর ভিডিও ফুটেজ ও ছবি প্রকাশ করেছে ইয়েমেনের হুতিরা। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2019, 08:41 AM
Updated : 30 Sept 2019, 09:13 AM

হুতিদের ভাষ্য সত্য হলে, এটি হবে প্রায় পাঁচ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দরিদ্র দেশ ইয়েমেনে চলা গৃহযুদ্ধে ইরানঘনিষ্ঠ হুতি বিদ্রোহীদের অন্যতম বড় বিজয়।

বিদ্রোহীদের এ দাবি প্রসঙ্গে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কাছ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

হুতিদের মালিকানাধীন আল মাসিরাহ টেলিভিশন নেটওয়ার্কে রোববার হুতিদের দাবির সপক্ষে কিছু ফুটেজও দেখানো হয়েছে। এতে দীর্ঘ, আকাবাঁকা লাইনে একদল ‘আটক সেনাকে’ হেঁটে যেতে দেখা যায়। আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধাদের বেশিরভাগেরই পরনে ছিল ইয়েমেন ও সৌদি আরবের একাংশের অধিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। বেশ কয়েকজনের শরীরে ইউনিফর্মও দেখা গেছে।

ক্যামেরার সামনে অন্তত দুইজন নিজেদের সৌদি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন; আরও কিছু ছবিতে সৌদি আরবের নাম ও প্রতীক চিহ্ন সম্বলিত সাঁজোয়া যান পুড়িয়ে ফেলতে এবং হুতিদের ‘জব্দ করা’ অস্ত্রও দেখানো হয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট এসব ভিডিও ও ছবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।

হুতিদের দাবি সঠিক হলে তা চলতি মাসে সৌদি তেল শিল্পক্ষেত্রে বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীটির হামলার দাবিকে আরও শক্তিশালী ভিত্তি দেবে বলেও ধারণা পর্যকবেক্ষকদের।

১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগারসহ সৌদি আরবের দুটি তেল প্ল্যান্টে ওই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর বিশ্বের তেল সরবরাহ পাঁচ শতাংশের বেশি হ্রাস পায়।

ওয়াশিংটন ও রিয়াদ হামলার জন্য ইরানকে দায় দিয়েছে। হুতিদের ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতার পেছনেও তেহরানই মূল চালিকা শক্তি, ভাষ্য তাদের।

ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশটির চারটি এলাকায় আংশিক যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে সৌদি আরবের সম্মতি বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে খবর প্রকাশের মধ্যেই সৌদি-ইয়েমেন সীমান্তে বড় ধরনের বিজয়ের এ দাবি করছে হুতিরা।

বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীটির এক প্রস্তাবের সূত্র ধরেই সৌদি আরব যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় বলেও জানিয়েছে ওই সংবাদমাধ্যমটি। ২০ সেপ্টেম্বরের এ প্রস্তাবে হুতিরা বলেছিল, সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী বিমান হামলা বন্ধ করলে তারাও সৌদি আরবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করবে।

হুতিদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সাহরিয়া ইয়েমেনের সানায় সাংবাদিকদের জানান, সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান এলাকার কাছে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর তিনটি ব্রিগেডকে পরাজিত করে তারা ‘কয়েকশ যানবাহন’ এবং দুই হাজারেরও বেশি যোদ্ধাকে আটক করেছেন।

নাজরান এলাকাটি ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রণাধীন সাদা প্রদেশের কাছে।

আটক সেনাদের মধ্যে ডজনখানেক সৌদি নাগরিক থাকলেও বেশিরভাগই সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করা ইয়েমেনি নাগরিক বলে জানিয়েছেন হুতি কর্মকর্তারা।

২০১৫ সালে হুতিরা ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর সৌদি আরবের নেতৃত্বে সুন্নী সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর একটি সামরিক জোট  ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত ওই সরকারের সমর্থনে যুদ্ধে নামে।

চারবছর ধরে চলা এ যুদ্ধ ইয়েমেনকে দুর্ভিক্ষ এবং দেশটির লাখ লাখ নাগরিককে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে, এমন চিত্র তুলে ধরে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।