আইএনএফ চুক্তির মৃত্যু, বিশ্বজুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরুর শঙ্কা

বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি রুখতে তিন দশক আগে স্নায়ু যুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল তার মৃত্যু হয়েছে।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2019, 08:12 AM
Updated : 2 August 2019, 08:18 AM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী শুক্রবার ‘ইন্টারমেডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়াল যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়া সহযোগিতা করছে না অভিযোগ তুলে ছয় মাস আগে ওয়াশিংটন চুক্তি প্রত্যাহারের ‘চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিল। জবাবে রাশিয়াও চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল।

রাশিয়ার এক সেনা বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ওই চুক্তি আর নেই। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় আমরা তা দেখার এবং নতুন অস্ত্রের উন্নয়নের অপেক্ষায় আছি।

“রাশিয়া সবদিক দিয়ে প্রস্তুত।”

১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এবং সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচভ আইএনএফ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

ওই চুক্তিতে ৫০০ কিলোমিটার থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছিল।

ঐতিহাসিক ওই চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে নুতন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে আশঙ্কা বিষেশজ্ঞদের।

কারণ, আইএনএফ চুক্তি এতদিন আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ হাতিযার হিসেবে কাজ করেছে।

রাশিয়ার আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে দাবি করে গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, যদি রাশিয়া চুক্তি রক্ষায় সহযোগিতা না করে তবে ২ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি প্রত্যাহার করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও নেটোর অভিযোগ, মস্কো নতুন ধরনের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের কাজ করছে।

“রাশিয়া ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্র (নেটো এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে এসএসসি-৮ নামে ডাকে) তৈরি করছে।”

যদিও রাশিয়া ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণার পর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছিলেন, এটা হলে ‘পরমাণু যুদ্ধ আটকাতে অমূল্য যে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিল তা শেষ হয়ে যাবে’।

“এতে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের যে হুমকি আমাদের উপর আছে তা হ্রাস না পেয়ে আরো বাড়বে।”

সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন কোনো পথে সমঝোতার ভিত্তিতে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

গত মাসে নেটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বিবিসিকে বলেছিলেন, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম, সহজে বহনযোগ্য, রাডার ফাঁকি দিতে ওস্তাদ এবং ইউরোপের যেকোনো শহরে কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে সক্ষম।

“এটা নিশ্চিতভাবেই আইএনএফ চুক্তির লঙ্ঘন এবং খুবই গুরুতর।

“গত কয়েক দশক ধরে আইএনএফ চুক্তি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু এখন আমরা ওই চুক্তির লঙ্ঘন দেখতে পাচ্ছি।”

রাশিয়ার আচরণে ওই চুক্তি অনুসরণের কোনো লক্ষণ নেই জানিয়ে তিনি আরো বলেছিলেন, “আমাদেরকে আইএনএফ চুক্তি বিহীন অবস্থার জন্য এবং রাশিয়া থেকে ছুটে আসা আরো অনেক বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য অবশ্যই প্রস্তুত হতে হবে।”