সাংবাদিককে পুলিশের হয়রানি: চীনজুড়ে ক্ষোভ, ক্ষমা প্রার্থনা

রাসায়নিক নির্গমনের একটি ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় এক পরিবেশবাদী নারী সাংবাদিককে পুলিশের হয়রানির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে চীনের পুলিশ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2018, 09:33 AM
Updated : 21 Nov 2018, 09:34 AM

ফুজিয়ান প্রদেশের দক্ষিণপূর্ব উপকূলীয় শহর কানঝৌতে পেট্রোকেমিক্যাল পদার্থ লিকেজ নিয়ে প্রতিবেদন করার সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক ঝোউ চেনের ‘পেছনে কীভাবে লেগে ছিল’ রোববার সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন ছেপেছে চীনের অর্থনীতি বিষয়ক প্রকাশনা কাইক্সিন।

ওই প্রতিবেদনেই অনুমতি ছাড়া চার পুলিশ সদস্যের ঝোউয়ের হোটেল কক্ষে প্রবেশ ও জিনিসপত্র অনুসন্ধানের অভিযোগ পাওয়া যায়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় পুলিশের ওই অভিযানের সময় পাজামা পরে ছিলেন বলেও লিখেছেন ঝোউ।

“পুলিশরা চলে যাওয়া পর আতঙ্কিত আমি দীর্ঘক্ষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলাম। কী করে তারা চেক-ইনের সময় নিবন্ধন করা, আইন মেনে চলা একজন নাগরিকের হোটেল কক্ষে হানা দিতে পারে,” প্রশ্ন তার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নারী তার এমন অভিজ্ঞতাকে ‘যৌনকর্মী ও খদ্দের ধরতে’ পুলিশের হানার ঘটনার সঙ্গেও তুলনা দিয়েছেন।

তার এ অভিযোগের পর চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক সমালোচনার ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে।

ক্ষোভ প্রশমনে পরে ক্ষমা চায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বিরল এক বার্তায় তারা ঝোউকে হয়রানির ঘটনার তদন্ত এবং এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের কথাও জানায়।

রয়টার্স বলছে, চীনে কাজ করা বিদেশি সাংবাদিকরা প্রায়ই তাদের সঙ্গে হওয়া পুলিশি হয়রানির বিষয়ে লিখলেও স্থানীয় সাংবাদিকদের এভাবে জনসম্মুখে অভিযোগ জানানোর ঘটনা বিরল।

ঝোউ-র ওই অভিযোগের পর অন্যান্য সাংবাদিকরাও তাদের সঙ্গে হওয়া পুলিশি হয়রানি ও প্রতিবেদন লেখায় হস্তক্ষেপের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলা শুরু করেন।

এক নারী সাংবাদিক বলেন ২০১৪ সালের কথা। সেসময় পুলিশের এক সদস্য তাকে হোটেলের কাঁচের দেয়ালঘেরা গোসলকক্ষ থেকে প্রস্রাবের নমুনা দিতে বাধ্য করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“প্রতিবেদকের পেছনে লেগে থাকার বিষয়টি এখন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নতুন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে,” বলেন কাইক্সিনের আরেক নারী সাংবাদিক লিয়াং ইংফেই।

তিনি উত্তরাঞ্চলীয় চীনে রিপোর্টিং করার সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন।

সেবার হোটেলে অবস্থানের সময় রিসেপশনের এক কর্মী ফোনে তার কক্ষে ফুটো থাকার কথা জানিয়ে তাকে বেরিয়ে আসতে বলেন। রিসেপশনে এসে লিয়াং দেখেন, হোটেল লবিতে অপেক্ষারত কর্মকর্তারা তাকে বের করে আনার জন্যই এমন ফন্দি এঁটেছিলেন।

আরেকবার একটি ঘটনা নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়া এক ব্যক্তির দুর্ভোগের কথাও লেখেন লিয়াং।

সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর থেকে একের পর এক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, ফোনে ওই ব্যক্তি এমনটাই তাকে জানিয়েছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে বলছেন, কর্মকর্তাদের যে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে, এসব ঘটনা তারই প্রতিচ্ছবি।

“আইনভিত্তিক শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর ধারাবাহিকভাবে জোর দিচ্ছি আমরা। কিন্তু কর্মকর্তারা তাদের অবস্থান সুরক্ষিত রাখতে যখন তখন তাদেরকে দেয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে,” লিখেছেন ভুক্তভোগী।