আদালতের ওই নথিতে বহিঃসমর্পণ ও গ্রেপ্তারের আগে ‘অ্যাসাঞ্জ’ নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য প্রকাশ্যে না আনতে বিচারকের কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল।
মার্কিন কৌঁসুলিরা বলছেন, নথিতে অভিযুক্তের বদলে ভুল করে অ্যাসাঞ্জের নাম ঢুকে গেছে।
যে অভিযোগের বিষয়ে বিচারকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে তার সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের কোনো যোগসাজশ নেই বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
উইকিলিকস বলছে, সম্ভবত একই প্রক্রিয়ায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে করা মামলার তথ্যও গোপন রাখতে অনুরোধ করা হয়েছিল। একই ধরনের আবেদন হওয়ায় সেই মামলার অনুরোধ থেকেই কথাগুলো ‘কাট-কপি পেস্ট’ হয়। যে কারণে অ্যাসাঞ্জের নামটিও থেকে যায়।
কৌঁসুলিরা প্রায়ই একই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘কাট-কপি পেস্টের’ আশ্রয় নেন।
বৃহস্পতিবার রয়টার্সের দেখা আবেদনটি চলতি বছরের অগাস্টে ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়ার আদালতে হয়েছিল।
উইকিলিকস ও তার প্রতিষ্ঠাতার অপরাধ নিয়ে ভার্জিনিয়ার কৌঁসুলিরা যে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন, মার্কিন কর্মকর্তারা তা আগেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনীতিক নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েসবাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে গোপন মামলা আছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। সে কারণেই জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে ছয় বছর আগে তিনি লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় চান।
সে থেকে ওই দূতাবাসেই আছেন এ ‘হুইসেলব্লোয়ার’। একুয়েডর তাকে নাগরিকত্ব দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে লেনিন মোরেরো সরকারের সঙ্গে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
যার প্রতিক্রিয়ায় অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ বেশ কয়েকটি সুযোগ সুবিধাও কেড়ে নেয় লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাস। এসব কার্যক্রমকে ‘মানবাধিকার লংঘন’ করে এর বিরুদ্ধে একুয়েডরের আদালতে অ্যাসাঞ্জের হয়ে তার আইনজীবীরা মামলাও করেছেন।
সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা থাকলেও পরে তা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু জামিনের শর্ত ভাঙার অপরাধে যুক্তরাজ্যে এখনও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
অ্যাসাঞ্জ বলছেন, দূতাবাস থেকে বের হলেই যুক্তরাজ্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।
যদিও উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে বহিঃসমর্পণে ওয়াশিংটনের অনুরোধ আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেওসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাই অ্যাসাঞ্জের বিচারের দাবি তুলেছিলেন।
বৃহস্পতিবার দেখতে পাওয়া নথিতে বলা হয়েছে, ‘অ্যাসাঞ্জ’কে গ্রেপ্তার ও তার বহিঃসমর্পণ নিশ্চিত করতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই হবে। তবে অভিযোগ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং এ ধরনের প্রক্রিয়ার কথা ‘অ্যাসাঞ্জ’ গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা যাবে না। সে কারণেই মামলার তথ্য গোপন রাখতে বিচারকের কাছে এ অনুরোধ।
প্রাথমিকভাবে ‘গোপনীয়’ থাকলেও গত সপ্তাহে নথিটি উন্মুক্ত করা হয় বলে বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। কী কারণে এটি উন্মুক্ত হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
গোপনীয় ওই নথিতে অ্যাসাঞ্জের নাম এল কীভাবে, তা নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের কোনো মন্তব্য করেননি। অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
“আদালতের ওই নথিতে ভুল আছে। যে নাম থাকার কথা নথিতে থাকা নামটি সেটি নয়,” বলেছেন কৌঁসুলি কার্যালয়ের মুখপাত্র জশুয়া স্টুয়েভ।
উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলার কথা গোপন রাখতে এ ধরনের কোনো আবেদন করা হয়েছে কিনা, সে সম্বন্ধে কিছু বলেননি তিনি।