হারিকেন মাইকেল: মৃত বেড়ে ২৭, নিখোঁজ হাজারেরও বেশি মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেলে হারিকেন মাইকেলের অভাবনীয় তাণ্ডবের পর সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও এখনো হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2018, 08:50 AM
Updated : 17 Oct 2018, 10:39 AM

নিখোঁজদের সন্ধান পেতে জোর তৎপরতা চলছে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব যোগাযোগ করতে পারছেন না, এমন ১ হাজার ১৩৫ জনের বেশি মানুষের খোঁজ করছে হিউস্টনভিত্তিক ‘ক্রাউডসোর্স রেসকিউ’ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল। 

গত সপ্তাহে ফ্লোরিডার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানা ওই চার মাত্রার ওই হারিকেন উপকূলীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকাকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।

কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর মধ্যে ১৭ জন ফ্লোরিডার, এক জন জর্জিয়ার, তিন জন নর্থ ক্যারোলাইনার এবং ছয় জন ভার্জিনিয়ার। ফ্লোরিডার আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে তারা ঝড়ে নিহত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্রাউডসোর্স রেসকিউয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ মারসেটি।  ধ্বংসস্তূপে অকার্যকর হয়ে পড়া সড়কগুলো পরিষ্কার ও ফোন সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

“যোগাযোগ করতে পারছি এমন একজনের বিপরীতে সম্ভবত তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না আমাদের,” বলেন ফ্লোরিডায় মাইকেল আঘাত হানার পর উদ্ধার কাজে কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবীর যোগান দেওয়া ক্রাউডসোর্সের ওই কর্মকর্তা।  তবে ফ্লোরিডার কর্মকর্তারা এখনো হারিকেন মাইকেলে নিখোঁজদের সঠিক কোনো সংখ্যা জানান নি।

ধ্বংসস্তূপ, উপড়ে পড়া গাছ ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারের কারণে আটকে পড়াদের কাছে পৌঁছাতে উদ্ধারকর্মীরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ক্রাউডসোর্স জানিয়েছে, বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুৎ ও ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সে ভিত্তিতেই তাদের নিখোঁজের এ তালিকাটি হয়েছে।

ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে আছড়ে পড়া মাইকেলে ‘অভাবনীয় ধ্বংসযজ্ঞ’ দেখেছে ফ্লোরিডাবাসী। এর মধ্যে মেক্সিকো বিচ শহরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঝড়ে নিখোঁজদের বেশিরভাগেরই বাস পানামা সিটিতে। এদের অধিকাংশই বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, হতদরিদ্র কিংবা একা থাকেন, বলছেন ম্যাথিউ।

“দুর্যোগ সাধারণত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলোর ওপরই বেশি আঘাত হানে,” বলেন ক্রাউডসোর্সের কর্মকর্তা।

ঝড়ের পর থেকে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্ব এলাকাগুলোর প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তছনছ হয়ে যাওয়া উপকূলীয় এলাকার অনেক বাসিন্দাকে বাধ্য হয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না কিংবা বারবিকিউ গ্রিল করে ক্ষুধা নিবারণ করতে হচ্ছে।

ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেলের তিনটি অঞ্চলের অন্তত ৮০ শতাংশ গ্রাহক মঙ্গলবার পর্যন্ত বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল; সংযোগ ফিরতে আরও কয়েক সপ্তাহও লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

খাবার পানির সংকট ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় অনেক এলাকার অসংখ্য মানুষকে কর্তৃপক্ষের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঝড়ের পর নিজেদের জিনিসপত্রের মধ্যে যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা নিয়ে অনেকে তাঁবুতেও রাত কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

অঙ্গরাজ্য সরকার বিপর্যস্ত মানুষদের মধ্যে বরফ, পানি ও তাৎক্ষণিকভাবে খাওয়া যাবে এমন প্রায় ৩০ লাখ প্যাকেট খাবার বিতরণ করেছে বলে জানিয়েছেন ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট।

তারবিহীন সংযোগ কার্যক্রমের পুনরুদ্ধারে ধীরগতিতে উপকূলীয় এলাকার অনেক বাসিন্দা হতাশা প্রকাশ করেছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার গ্রাহকদের বিল মওকুফে ওয়ারলেস ক্যারিয়ারগুলোর প্রতি মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় যোগাযোগ কমিশনের চেয়ারম্যান অজিত পাই আহ্বানও জানিয়েছেন।