ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্টের মন্তব্যে চাপে মোদী সরকার

ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তিতে ভারতীয় ব্যবসায়ী অনিল আম্বানীর কোম্পানিকে চুক্তির অংশীদার করতে মোদী সরকার বাধ্য করেছিল, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দের এমন মন্তব্যে চাপে পড়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2018, 04:53 PM
Updated : 22 Sept 2018, 05:04 PM

শুক্রবার ফরাসি সাময়িকী মিডিয়াপার্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অলন্দ এসব কথা বলেছেন বলে খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিডিয়াপার্টে দেওয়া উদ্ধৃতিতে অলন্দ বলেছেন, “এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার ছিল না। ভারতীয় সরকার এই সার্ভিস গ্রুপটির প্রস্তাব করে এবং দাসো (রাফালের নির্মাতা ফরাসি কোম্পানি) আম্বানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে। আমাদের কিছু করার ছিল না; ওই অংশীদারকেই গ্রহণ করেছি যাকে আমাদের দেওয়া হয়েছিল।”

অলন্দ প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফ্রান্স সফরে গিয়ে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি ঘোষণা করেন। পরের বছর অলন্দের দিল্লি সফরের সময় চুক্তি চূড়ান্ত হয়।

৫৯ হাজার কোটি রুপির চুক্তির ১৫ শতাংশ অর্থ অগ্রিম দেয় ভারত। বিজেপি সরকারের ‘মেক ইন্ডিয়া’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আরও ৯০টি যুদ্ধবিমান ভারতের তৈরি করার চুক্তি হয়, এই কাজ পায় ভারতীয় ব্যবসায়ী অনিল আম্বানির কোম্পানি রিলায়েন্স ডিফেন্স ইন্ডাষ্ট্রিজ।

চুক্তিতে রিলায়েন্স ডিফেন্সের ঢুকে পড়া নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, যুদ্ধবিমান তো দূরের কথা, কোনো ধরনের বিমান তৈরির অভিজ্ঞতাই নেই রিলায়েন্স ডিফেন্সের। এই কোম্পানি রাফালের মতো উন্নত যুদ্ধবিমান তৈরির চুক্তিতে কী ভাবে ঢুকে পড়ল, বিতর্ক এ নিয়েই।

এ বিষয়ে মোদী সরকার দাবি করেছিল, ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ‘হিন্দুস্তান এরোনোটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)’-রও যুদ্ধবিমান তৈরির কোনও অভিজ্ঞতা নেই।

কিন্তু সরকারের এ দাবিকে নাকচ করে দিয়ে হ্যালের সদ্যসাবেক প্রধান টি সুবর্ণ রাজু বলেছেন, “যে সুখোই এখন ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান অস্ত্র, চতুর্থ প্রজন্মের সেই যুদ্ধবিমান যদি হ্যাল কাঁচামাল থেকে তৈরি করতে পারে, তাহলে রাফাল তৈরির ক্ষমতাও আমাদের ছিল।”

এ বিষয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, “মোদীই দেনায় ডুবে থাকা অনিলের কোম্পানিকে রাফালের চুক্তি পাইয়ে দিয়েছেন।”

ভারতে এই বিতর্ক চলার সময়ই ‘বোমা ফাঁটান’ সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট অলন্দ। তিনি জানান, অনিলের রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজকে রাফাল চুক্তির অংশ করতে মোদী সরকারই ফরাসি সরকারকে বলেছিল।

ওলন্দের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার পরই শনিবার এক টুইটে রাহুল বলেন, “ওলন্দের বরাতে জানলাম, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি দেউলিয়া অনিলক আম্বানিকে পাইয়ে দিয়েছেন। তিনি দেশকে ঠকিয়েছেন। জওয়ানদের রক্তকে অসম্মান করেছেন।”

অনিল আম্বানির দাবি, রাফাল-নির্মাণকারী সংস্থা দাসোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তার সংস্থার, সেখানে মোদী সরকারের ভূমিকা নেই।

কিন্তু সাক্ষাৎকারে ওলন্দ বলেছন, ‘‘ভারত সরকার ওই গোষ্ঠীর নাম প্রস্তাব করে। অম্বানীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে দাসো। আমরা কাউকে পছন্দ করিনি।”

কংগ্রেসের দাবি, মোদী প্রায় তিনগুণ বেশি দামে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় ভারতের ৪১ হাজার কোটি রুপি ক্ষতি হয়েছে, আর বাকি ৯০টি বিমান ভারতের তৈরির কাজ পেয়ে অনিলের কোম্পানি প্রায় ৩০ হাজার রুপি আয় করতে যাচ্ছে।

শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিয়ে ফ্রান্সের সরকারও একটি বিবৃতি দেয়। তারা বলেছে, চুক্তিতে সহযোগী হিসেবে ভারতের কোন কোম্পানিকে বেছে নিবে দাসো অ্যাভিয়েশন, সে বিষয়ে ফ্রান্স সরকার কোনো ভূমিকা রাখেনি।

বিবৃতিতে এসব কথা বলা হলেও ওলন্দের অভিযোগ সম্পর্কে এতে কিছু বলা হয়নি, ওলন্দের বক্তব্য অস্বীকারও করা হয়নি। ফলে মোদীর ওপর তৈরি হওয়া রাজনৈতিক চাপ এতে এতটুকুও কমেনি।

রাফাল যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন তাদের বিবৃতিতে বলেছে, সহযোগী সংস্থা হিসেবে ভারতের রিলায়্যান্স ডিফেন্স ইন্ডাষ্ট্রিজকে তারাই বেছে নিয়েছিল।

কিন্তু ওলন্দ বলেছেন, তারা বেছে নিতে ‘বাধ্য হয়েছিল’।

দাসোও ওলন্দের এই অভিযোগ সম্পর্কে কোনো কিছু বলেনি। ওলন্দের অভিযোগ সম্পর্কে ফ্রান্সের সরকার ও দাসোর বিবৃতিতে কোনো বক্তব্য না থাকায় মোদীর ওপর থেকে চাপ সরছে না।

শনিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রাহুল বলেছেন, “মোদীকে চোর বলেছেন সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট, তা সত্বেও এখনও নীরব ভারতে প্রধানমন্ত্রী।”

নিরবতা ভেঙে বেরিয়ে আসার জন্য মোদীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

সব মিলিয়ে ভারতীয় রাজনীতিতে রাফাল চুক্তি ভালোভাবেই নাড়া দিয়েছে এবং এটি গত শতাব্দির আটকের দশকের বোফর্স চুক্তি কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য ভারতীয় গণমাধ্যমের।