রোববার থেকেই দেশটির নারীরা বৈধভাবে গাড়ির চালকের আসনে বসার অনুমতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় পর অনেক নারী রোববার (শনিবার মধ্যরাতের পর) গভীর রাতেই স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে বসে ছবি তুলেছেন, বৈধভাবে গাড়ি চালিয়ে ভেঙেছেন কয়েক দশকের অর্গল।
গাড়ি চালকদের জন্য এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না বলে মন্তব্য করেন ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী হাতুন বিন দাখিল।
“আমাদের আর পুরুষদের প্রয়োজন পড়বে না,” বলেন তিনি।
২৩ বছর বয়সী মাজদুলীন আল আতিক নিজের কালো লেক্সাস গাড়ি চালিয়ে প্রথমবারের মতো রাজধানী রিয়াদজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, “অলৌকিক মনে হচ্ছিল, আমি অত্যন্ত খুশি। গাড়ি চালাতে পের আমি খুব গর্ব অনুভব করছি।”
নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া নিয়ে গাড়ির কোম্পানিগুলো নাটকীয় বিভিন্ন বিজ্ঞাপন করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রাইভেট পার্কিং গ্যারেজগুলোতে গোলাপি রংয়ের সাইনে ‘লেডিস’ লেখায় নারীদের পার্কিং এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই সৌদি কর্তৃপক্ষ নারীদের গাড়ি চালনায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নিবন্ধন পাওয়া নারীরা চলতি বছরের ২৪ জুন থেকে গাড়ি চালানোর অনুমতি পাবেন বলেও জানিয়েছিল তারা।
ওই ধারাবাহিকতাতেই চলতি মাসের প্রথম দিক থেকে নারী চালকদের জন্য লাইসেন্স ইস্যুও শুরু হয়।
চলতি মাসের ৫ তারিখে সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরের ১০ নারী তাদের বিদেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স বদলে সৌদি লাইসেন্স নেন। এরাই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া প্রথম সৌদি নারী। এরপর নিয়মিতভাবে লাইসেন্স ইস্যু শুরু হয়।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার আগেই প্রায় দুই হাজার নারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিল সৌদি কর্তৃপক্ষ।
অবশ্য অনেক সৌদি পুরুষই এ ঘোষণায় সন্তুষ্ট নন; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবিতে ‘তোমরা গাড়ি চালাতে পারবে না’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রতিবাদও জানাচ্ছেন তারা।
শনিবার পর্যন্ত কট্টর ধর্মীয় শাসনে পরিচালিত সৌদি আরবই ছিল বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না। পরিবারগুলোকে নারী সদস্যের জন্য আলাদা চালক ভাড়া করতে হতো।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সৌদি কর্তৃপক্ষ গাড়ি চালানোর অধিকার চেয়ে আন্দোলন করা নারী মানবাধিকার কর্মীদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে নারীদের গাড়ি চালনার অধিকারের পক্ষে জোর প্রচারণা চালানো লুজাইন আল-হাথলৌলও আছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সৌদি নারীদের পুরুষ অভিভাবকের ওপর নির্ভর করার বাধ্যতামূলক আইন বদলানোসহ বিস্তৃত সংস্কারে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
বেআইনীভাবে গাড়ি চালানোর কারণে ১৯৯০ সালেও রিয়াদে কয়েক ডজন নারী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে এবং ২০১১ থেকে ২০১৪-র মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেক নারীকেই স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে তাদের উপস্থিতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা গেছে।