নিষেধাজ্ঞার বদলায় মার্কিন দূত বহিষ্কার ভেনেজুয়েলার

নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বদলায় ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 06:09 AM
Updated : 23 May 2018, 06:09 AM

ভেনেজুয়েলার রোববারের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দেশটির ওপর নতুন ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

‘সামরিক ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত অভিযোগ তুলে মার্কিন শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স টড রবিনসন ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ব্রায়ান নারনজোকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভেনেজুয়েলা ছাড়ার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট মাদুরো, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বহিষ্কৃত দূতদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত না জানালেও মার্কিন দূতাবাস তার দেশের সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অনধিকার চর্চা করছে বলে অভিযোগ মাদুরোর। দ্রুত এ সম্পর্কিত প্রমাণ হাজির করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

কারাকাসের কেন্দ্রস্থলে নির্বাচন কমিশনের সদরদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে মাদুরো বলেন, “ষড়যন্ত্র করে কিংবা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তোমরা ভেনেজুয়েলাকে ফিরে পাবে না।”

অপরদিকে তাদের দুই শীর্ষ কূটনীতিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ।

ওয়াশিংটনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নয়ের্ত দুই দূতের ব্যাপারে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের করা অভিযোগকে ‘মিথ্যা’অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব পালন করে আসছেন রবিনসন। মঙ্গলবার বিকালে ভেনেজুয়েলার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মেরিদাতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যও রেখেছিলেন তিনি।

ভেনেজুয়েলা ছাড়ার নির্দেশ পাওয়ার পর স্থানীয় গণমাধ্যমের ফেইসবুক লাইভ সম্প্রচারে রবিনসন বলেন,“আমার এবং ব্রায়ান নারনজোর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। মেরিদোতে এটা আমার প্রথম সফর, এটাই শেষ সফর হবে না।” 

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জেনেজুয়েলার প্রয়াত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট উগো চাভেজের উত্তরসূরী মাদুরো। কিন্তু এই নির্বাচনে ‘গণতান্ত্রিক মানদণ্ড’ পূরণ করা হয়নি অভিযোগ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) অনেকগুলো লাতিন দেশ।

ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন মাদুরোবিরোধীরা। দুই জনপ্রিয় বিরোধী প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় ৫৫ বছর বয়সী ইউনাইটেড সোশালিস্ট পার্টির নেতা মাদুরোর জন্য নির্বাচনে জয় পাওয়া সহজ হয়ে যায় বলে অভিমত পর্যবেক্ষকদের।

সোমবার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির সক্ষমতা সীমিত করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেন।

এরই প্রতিক্রিয়ায় মাদুরো কারাকাসে যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ কূটনীতিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে ভেনেজুয়েলার বাণিজ্যমন্ত্রী হোনে ভিয়েলমা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা তার দেশের অর্থনীতিতে ‘ভয়াবহ প্রভাব’ ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আগের নিষেধাজ্ঞাগুলোতে মাদুরো প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পদ সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এবার ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশের ফলে মার্কিন নাগরিকরা ভেনেজুয়েলার তেল এবং অন্যান্য সম্পদ বিক্রিতে অংশ নিতে পারবেন না।

এসব সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে ভেনেজুয়েলার জ্বালানি এবং অপরিশোধিত তেলের চালান অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করেছেন ভিয়েলমার।

দ্বিতীয় মেয়াদে ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মাদুরোর ওপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা অব্যাহত আছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে  ইইউও রোববারের নির্বাচন ‘ন্যূনতম আন্তর্জাতিক মান’ অর্জন করেনি জানিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

মাদুরোবিরোধী প্রধান অংশটি বয়কট করলেও বয়কট কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন দেশটির একটি রাজ্যের সাবেক গভর্নর হেনরি ফ্যালকন।

ভোট গ্রহণ শেষে গণনা শুরুর আগেই ফল প্রত্যাখ্যান করে মাদুরোবিরোধী এ প্রার্থী নির্বাচনে শতাধিক অনিয়মের অভিযোগ আনেন।

ভেনেজুয়েলার এবারের নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৫০ শতাংশেরও কম, ২০১৩-র নির্বাচনেও এ হার ছিল ৮০ শতাংশের উপরে।

নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলাকে নতুন করে ঋণ না দিতে রাশিয়া ও চীনকে রাজি করাতেও চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মস্কো ও বেইজিং ভেনেজুয়েলায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা উপেক্ষা করে চীন ও রাশিয়া ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মিত্রতা অব্যাহত রাখবে বলেই ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলাকে তাদের বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে। অপরদিকে ওয়াশিংটনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা হবে না বলে জানিয়েছে মস্কো।