এক বছর পূর্তিতেই কঠিন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার এক বছর পূর্তির দিনেই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিনটি  বিশেষভাবে উদযাপনের পরিকল্পনা তার থাকলেও তেমন পরিবেশ নেই মোটেই।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2018, 03:31 PM
Updated : 20 Jan 2018, 05:23 PM

সরকারের নতুন বাজেট বিল নিয়ে অচলাবস্থায় দেশের সরকার অচল হয়ে পড়ার মধ্যে ট্রাম্প আর ডেমোক্র্যাটদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপে বিরাজ করছে তালগোল পাকানো এক পরিস্থিতি।

ফলে সরকার সচল করার চেষ্টা নিয়েই এখন ক্ষমতার একবছর পূর্তির দিনটি পার করতে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে।

এদিন ভোরের দিকে এক টুইটে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের খোঁচা দিয়ে লিখেছেন, “আজ আমার প্রেসিডেন্সির একবছর। আর ডেমোক্র্যাটরা আমাকে একটি চমৎকার উপহার দিতে চেয়েছে। তা হচ্ছে, #ডেমোক্র্যাটশাটডাউন।”

তবে ডেমোক্র্যাটরা দ্বিদলীয় আপোস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য উল্টো ট্রাম্পকেই দোষারোপ করছেন। তারা বলছেন, ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদ, সিনেট এবং হোয়াইট হাউজও রিপাবলিকান দলের নিয়ন্ত্রণে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো সরকারের জন্য এমন ঘটনা এটিই প্রথম।

গত বছরের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প।

শনিবার এর এক বছর পূর্তির দিনটি ট্রাম্প ফ্লোরিডার পাম বিচে কাটানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সেখানে তহবিল সংগ্রহের জন্য বিশেষ একটি প্রচারাভিযান এবং ভোজনের পরিকল্পনা ছিল তার।

কিন্তু দিনটি শুরুর মুহূর্তেই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে এক বিরূপ মন্তব্যে বর্ষপূর্তি উদযাপনের আমেজ মাটি হয়ে যায় ট্রাম্পের। প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটিক নেতা ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের একবছরের অর্জন নিয়ে মন্তব্য করেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতৃত্বে ব্যর্থতার জন্য ‘এফ’ পেয়েছেন।”

সরকারে অচলবস্থা নিরসনে কী করণীয় তা নিয়ে তৎপরতার মধ্য দিয়ে পরে শনিবারের সকাল শুরু করেন ট্রাম্প।

রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট নেতারা সমস্যা সমাধানে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। সোমবারের আগেই কোনো সমাধান পাওয়া যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন হোয়াইট হাউজের বাজেট বিষয়ক প্রধান।

কিন্তু তা যদি না হয়, তাহলে নতুন কর্মসপ্তাহের শুরুতেই জরুরি প্রয়োজন নেই কেন্দ্রীয় সরকারের এমন অনেক কর্মীকে অবৈতনিক ছুটিতে যেতে হবে,  সরকারের অধীনস্ত অনেক দপ্তরও বন্ধ হয়ে যাবে।

ফলে ট্রাম্পের এক বছর পুর্তির এ সময়টিতে কঠিন সময় পাড়ি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তার শাসনের গত ১২ টি মাসও অবশ্য ছিল বিতর্ক আর বিশৃঙ্খলায় উথাল-পাথাল।

ওই কয়েকটি মাসে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের রদবদল, অভিবাসী বিরোধী অবস্থান, ওবামার স্বাস্থ্যনীতি পাল্টাতে ব্যর্থতা, পরিবেশ, পররাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ, যৌন হয়রানির অভিযোগ, টুইট করা নিয়ে বিতর্ক ও নানা মন্তব্যের জন্য আলোচনার শীর্ষে ছিলেন ট্রাম্প।

আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার পূর্বসূরি বারাক ওবামা প্রশাসনের স্বাস্থ্যনীতি বাতিলের নির্বাহী আদেশে সই করেন। এরপরই সরব হন মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে।

এক সপ্তাহের মাথায় ৭ মুসলিম দেশের ওপর ৯০ দিন এবং শরণার্থীদের ওপর ১২০ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ দেন তিনি।

৯ মে আচমকা গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প। নির্বাচনে রুশ সংযোগ তদন্ত করছিলেন কোমি।

এছাড়াও, অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়টস, ট্রাম্পের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজার স্টিভ ব্যানন, যোগাযোগ ব্যবস্থাপক অ্যান্থনি স্কারামুচি, হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব শন স্পাইসারসহ আরো কয়েকজনকে পদ ছাড়তে হয়।

জুনের শুরুতেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তি 'টিপিপি' থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন বেশ কয়েকজন নারী। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রাগার উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন ট্রাম্প। দেশটির নেতা কিম জন উনকে ‘রকেটম্যান’ আখ্যা দেন। ট্রাম্পের এ বিস্ফোরক মন্তব্যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত উস্কে দেন ট্রাম্প। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য আখ্যা দিয়ে দেশটিতে অর্থ সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।

আফ্রিকান নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করে অফ্রিকাসহ বিশ্বের মানুষের-- এমনকি মার্কিনীদেরও তোপের মুখে পড়েন ট্রাম্প।

মিডিয়ার প্রতি বৈরি মনোভাবাপন্ন ট্রাম্প ‘ফেইক নিউজ অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করে নতুন ধারার উদ্ভব ঘটিয়েছেন।

আখ্যা পেয়েছেন সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসাবে। বহু জরিপেই ক্ষমতার একবছরে তার প্রতি জনসমর্থন অত্যন্ত কম দেখা গেছে।

জরিপে মাত্র ৩৯ শতাংশ মার্কিনি ট্রাম্পের ওপর আস্থা প্রকাশ করেছে। যেখানে তার আগের প্রায় সব প্রেসিডেন্টেরই জনপ্রিয়তার হার ছিল ৫০ শতাংশের ওপরে।

কেবল কর সংস্কার বিল ছাড়া কংগ্রেসে ট্রাম্প প্রশাসনের আর কোনো বিলই পাস হয়নি। তবে এই এক বছরে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।