প্র্যাঙ্ক কল: কানসাসে পুলিশের গুলিতে নিরপরাধ যুবকের মৃত্যু

প্র্যাঙ্ক কল করে দেওয়া ভুল তথ্যের সূত্রধরে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2017, 09:48 AM
Updated : 31 Dec 2017, 09:48 AM

এ ঘটনায় ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কানসাস পুলিশ; পুলিশের গুলিতে যুবক নিহতের ঘটনায় ওই প্র্যাঙ্ক কলকে দায়ী করা হচ্ছে বলে খবর বিবিসির।

বৃহস্পতিবার উইচিটার নিজ বাড়ির সদর দরজায় ২৮ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু ফ্লিঞ্চ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। 

ফোনে এক যুবক নিজের বাবাকে গুলি করে হত্যা এবং মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আটকে রাখার দাবি করার পর পুলিশ উইচিটার ওই বাড়ি ঘেরাও করেছিল।

অনলাইনে ‘কল অব ডিউটি’ খেলা দুই গেমারের দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে ওই ‘ধাপ্পাবাজি কল’ করা হয়েছিল বলে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

পুলিশকে করা ওই জরুরি ফোনের অডিও পরে প্রকাশ করা হয়, যাতে যুবক নিজের হাতে একটি হ্যান্ডগান আছে বলেও জানায়। বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয় সে।

ফোনে দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে পুলিশ উইচিটার বাড়ি ঘেরাও করে ভেতরে থাকা যুবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফিঞ্চ বেরিয়ে আসেন।

২৮ বছর বয়সী ফিঞ্চ পুলিশের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী হাত মাথার উপর না তুলে বেশ কয়েকবার কোমরের কাছে নেয়ার চেষ্টা করলে তার দিকে এক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয় বলে দাবি কর্মকর্তাদের। 

ফিঞ্চের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না বলে পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়; গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তল্লাশির পর বোঝা যায়, ফিঞ্চের পরিবারের চার সদস্যের কেউই নিহত, আহত কিংবা জিম্মি ছিলেন না।

এরপরই ‘প্র্যাঙ্ক কলের’ সূত্র অনুসন্ধান শুরু হয়। শুক্রবার পুলিশ ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ২৫ বছর বয়সী টেইলার বেরিসকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে দুই বছর আগে স্থানীয় একটি টেলিভিশন স্টেশনে বোমা হামলা চালানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আছে বলেও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

পুলিশ বলছে, গেমারদের ‘সোয়েটিং’ এর কারণে ওই প্র্যাঙ্ক কলটি করা হয়েছিল; যার সূত্র ধরে ভুল ঠিকানার এক নিরপরাধ যুবক পুলিশের গুলিতে মারা পড়ে।

‘সোয়েটিং’ শব্দটি গেমিং জগতে বেশ পরিচিত; এর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশের স্পেশাল উইপন অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট) সদস্যদের হাজির করার চেষ্টা করা হয়। তথ্য দেওয়া ব্যক্তি সাধারণত নম্বর লুকিয়ে কিংবা এমন কোনো স্থান থেকে ফোন দেন, যা চিহ্নিত করা কঠিন।

মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, খেলা নিয়ে এক গেমারকে অন্য গেমারের হুমকির সূত্র ধরেই ওই ‘সোয়েটিং’ এর ঘটনা ঘটে; হুমকি দেওয়া গেমার প্রথমজনের একটি ভুল ঠিকানা আরেকজনকে দেয়। অনলাইন জগতে ‘সোয়েটিং’ এর জন্য পরিচিত তৃতীয় ওই গেমার পরে পুলিশকে প্র্যাঙ্ক কল করেন।

নিহত ফিঞ্চ অনলাইন গেমিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। যে গেমারদের দ্বন্দ্বে এই ‘সোয়েটিং’, উইচিটার ঠিকানার সঙ্গে তাদের কোনো ধরণের যোগাযোগ ছিল না বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

“প্র্যাঙ্কস্টারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন এ ধরণের কর্মকাণ্ডে মানুষ ও প্রাণ ঝুঁকিতে পড়ে। যে ঘটনা ঘটেছে তা সবার জন্যেই দুঃস্বপ্ন, ওই পরিবার এমনকি আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জন্যও। প্র্যাঙ্কস্টারদের কর্মকাণ্ডের কারণেই নিরপরাধ একজনকে জীবন দিতে হয়েছে। ওই মিথ্যা কল না করা হলে পুলিশ সেখানে যেত না,” বলেন উইচিটা পুলিশের ডেপুটি চিফ ট্রয় লিভিংস্টোন।

যে গেমিং প্ল্যাটফরমে সামান্য পুরস্কারের বিনিময়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ‘কল অব ডিউটি’ খেলা হয়, সেই ইউএমজি গেমিং এক বিবৃতিতে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পুলিশি তদন্তে সহায়তার কথা জানিয়েছে।