তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে দুবাইভিত্তিক একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে থাকার কথা নির্বাচনের হলফনামায় লুকিয়েছিলেন নওয়াজ।
দেশটির সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার এক আদেশে বলেছে, পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ‘সৎ থাকার’ পূর্বশর্ত লঙ্ঘন করেছেন নওয়াজ। একারণে তিনি এখন পার্লামেন্ট সদস্য থাকার ‘যোগ্য’ নন।
পাকিস্তানের দৈনিক দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে নওয়াজের সেই অসততা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
নওয়াজ শরিফ পরিবারের তিন পুরুষের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নিয়ে আদালতের গঠিত যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) ১০ খণ্ডের যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে এই বিষয়ের উল্লেখ থাকলেও তথ্য গোপনের অভিযোগ হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু শুনানিতে বিষয়টিকে আমলে নিয়ে আদালত আদেশ দেয়।
টান টান উত্তেজনার মধ্যে আদালতের ওই রায়ের পর নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা আসে। আগের দুই বার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এনের এই নেতার তৃতীয় মেয়াদের পরিসমাপ্তি ঘটে দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে।
পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট জেআইটির প্রতিবেদনে আসা অভিযোগের তদন্ত ও বিচারের দায়িত্ব দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ আদালতের (অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোর্ট) উপর ন্যস্ত করেছে।
কিন্তু জেআইটির তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতেই নওয়াজকে নওয়াজকে সরাসরি অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারক।
প্রতিবেদনে তদন্ত সংস্থা জেআইটি বলেছে, নওয়াজ শরিফ যে দুবাইভিত্তিক ‘ক্যাপিটাল এফজেডই’ নামের একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন তার প্রমাণ সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জেবেল আলি ফ্রি জোন অথরিটির (জাফজা) কাছ থেকে তারা পেয়েছে।
সেখানে দেখা যায়, ২০০৬ সালের ৭ অগাস্ট থেকে ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বেতন হিসেবে ১০ হাজার দিরহাম নিয়েছেন নওয়াজ।এরই মধ্যে ২০১৩ সালে নির্বাচনে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন এই মুসলিম লীগ নেতা। কিন্তু তিনি মনোনয়নপত্রে সে বিষয়ের উল্লেখ করেননি।
নওয়াজ শরিফ শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে তার আইনজীবী খাজা হারিস আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের জেরায় স্বীকার করে নেন, ক্যাপিটাল এফজেডইর মালিক প্রধানমন্ত্রীর ছোট ছেলে হাসান নওয়াজ; প্রধানমন্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে দুবাইভিত্তিক খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সব কর্মীর ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বেতন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তা করতে ব্যর্থ হলে কোম্পানি কালো তালিকাভুক্ত এবং বন্ধ হয়ে যাবে।
এই আইনি বিষয়টিই নওয়াজের পতনের জন্য অনুঘটক হিসেবে হিসেবে কাজ করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, আদালতের কাছে প্রশ্ন হলো- নওয়াজ শরিফ ‘ক্যাপিটাল এফজেডই’র পর্ষদ চেয়ারম্যান হিসেবে বেতনভুক্ত ছিলেন কি না এবং বেতন না তোলা হলেও তা ‘পাওনা’ বলে সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে কি না, যেটা ১৯৭৬ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরওপিএ) ১২(২) ধারা অনুসারে ঘোষণা দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং ঘোষণা দেওয়ার ব্যর্থতায় অযোগ্যতা প্রমাণিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ‘ইকামা’ নেওয়া, দুবাইভিত্তিক কোম্পানির চেয়ারম্যান হওয়া এবং বেতন না তুললেও তার বেতনভুক্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে তার আইনজীবী যে বিবৃতি আমলে নিয়েছে আদালত।
আর তাই ২০১৩ সালের নির্বাচনের মনোনয়নপত্রে ‘প্রাপ্তিযোগ্য’ বেতনের বিষয়ে ঘোষণা না দেওয়ায় নওয়াজ শরিফ ‘অসৎ’ প্রমাণিত হয়েছেন বলে আদালত সিদ্ধান্ত টেনেছে।
“সেখানে বাদী উল্লেখিত সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি, সেটা শপথ নিয়েও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরওপিএ) ১৯৭৬ এর ৯৯(১)(এফ) ধারা ও পাকিস্তানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ৬২ (১)(এফ) ধারা মোতাবেক তিনি (নওয়াজ) অসৎ।”
তাই নওয়াজ শরিফকে যেতেই হবে বলে পাঁচ বিচারপতির সবাই একমত।