মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের অভিযোগ জাতিসংঘের

মিয়ানমার তাদের ভূখন্ড থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উৎখাত করতে তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালাতে চাইছে বলে বিবিসি’র কাছে অভিযোগ করেছেন এক ঊর্ধ্বতন জাতিসংঘ কর্মকর্তা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2016, 02:59 PM
Updated : 24 Nov 2016, 04:49 PM

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক বলেন, সশস্ত্র বাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গদেরকে হত্যা করছে। অভিযান থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যু হয়। এরপরই আশেপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ধর পাকড় শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান।

 এ অভিযানে শতাধিক মানুষের প্রাণ হারানোর খবর পাওয়া গেলেও মিয়ানমার সরকার কোনওরকম নৃশংসতার খবর অস্বীকার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচে বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০ থেকে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ৮২০টি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে ওই সময়ের আগের ও পরের স্যাটেলাইট ছবি মানবাধিকার সংগঠনটি দেখিয়েছে।

তবে মিয়ানমার সরকারের দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণে রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিজেরাই নিজেদের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রকৃত ঘটনার উপর রঙ ছড়াচ্ছে বলেও দাবি করেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র।

রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি আসলে কী, সেটা স্বাধীনভাবে যাচাইয়ের সুযোগ ঘটছে না। কারণ ওই এলাকায় বিদেশি সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করেছে মিয়ানমার সরকার।

রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মিয়ানমারে গেছে বলে মনে করে সেখানকার বৌদ্ধরা।

বাংলাদেশের সীমান্তশহর কক্সেসবাজার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর প্রধান বিবিসি বাংলার আকবর হোসেইনকে বলেন, “এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টায় মিয়ানমারের ভেতরে সমস্যার ‘মূল কারণের’ ওপর দৃষ্টিপাত করতে হবে।’’

৯ অক্টোবরের ঘটনায় ৯ সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুকে ঘিরে মিয়ানমরের সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী পুলিশ একযোগে রোহিঙ্গাদের সাজা দিতে মাঠে নেমেছে।  অক্টোবরের ওই হামলার ঘটনার জন্য কয়েকজন রাজনীতিবিদ রোহিঙ্গা জঙ্গি দলকে দায়ী করেছে।

নিরাপত্তা বাহিনী তাদেরকে গুলি করে মারছে, শিশুদের গলা কেটে হত্যা করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, লুটপাট করছে। এ অত্যাচারের মুখে রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানান জাতিসংঘ কর্মকর্তা ম্যাককিসিক।

তিনি বলেন, “এখন বাংলাদেশ সরকারের জন্যও সীমান্ত খোলা রাখা খুবই মুশকিল। কারণ, তা করলে মিয়ানমার সরকার দমনপীড়ন চালিয়ে যেতে উৎসাহী হবে এবং জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের চূড়ান্ত লক্ষ্য হাসিল না করা পর্যন্ত তারা রোহিঙ্গদেরকে তাড়িয়ে দিতে থাকবে।”