যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এখনকার এক-পঞ্চমাংশ করার প্রস্তাব দিতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন; এ ব্যাপারে জেলেনস্কি বলেছেন, কিইভ রাশিয়ার এমন দাবি মেনে নেবে না।
Published : 22 Jan 2025, 12:37 PM
মস্কোর সঙ্গে যে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির পর নতুন কোনো রুশ আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেইনের অন্তত ২ লাখ ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইউক্রেইনের এ প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষমতায় ফিরে দ্রুতই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কয়েক মাস ধরেই দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
তার শপথ নেওয়ার একদিন পর জেলেনস্কিও যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে কথা বললেন। তিনি মহাদেশের সুরক্ষায় ইউরোপীয় নেতাদের আরও বেশি কিছু করারও তাগাদা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিইভ ও ইউরোপ নানাকিছু ভাবছে, দ্রুত কোনো বিরতিতে গেলে রাশিয়া পরে নতুন হামলা চালাবে কিনা সে শঙ্কা ঘুরেফিরে আসছে। এ ধরনের কিছু ঠেকাতে ইউক্রেইনে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়টি তাই বারবার আলোচিত হচ্ছে।
“পুরো ইউরোপ থেকে? অন্তত দুই লাখ। এটা লাগবেই, না হলে কিছুই হবে না,” ভাষণ শেষে ইন্টারভিউ প্যানেল থেকে ইউক্রেইনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর ধারণা নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই বলেন জেলেনস্কি।
শান্তিরক্ষী হিসেবে তিনি যে সেনা চাইছেন তা ফ্রান্সের সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্যের কাছাকাছি। ২০২০ সালে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা দুই লাখের সামান্য কিছু বেশি হবে বলে ধারণা দিয়েছিল।
রাশিয়ার সেনা সংখ্যা ১৫ লাখ, ইউক্রেইনের আছে এর অর্ধেক। তাই ইউক্রেইনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তত ২ লাখ শান্তিরক্ষী লাগেই, যুক্তি জেলেনস্কির।
ইউক্রেইনের এ প্রেসিডেন্ট জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠানে কিইভ চেষ্টা চালাচ্ছে।
“একটা বৈঠক আয়োজনে কাজ চলছে, এটা প্রক্রিয়াধীন,” বলেছেন তিনি।
সোমবার হোয়াইট হাউজে ফেরা ট্রাম্প ইউক্রেইনে যুদ্ধ দ্রুত থামিয়ে দেবেন এমন অঙ্গীকার করলেও কীভাবে এটা করবেন তা এখনো খোলাসা করেননি।
যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এখনকার এক-পঞ্চমাংশ করার প্রস্তাব দিতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন; এ ব্যাপারে জেলেনস্কি বলেছেন, কিইভ রাশিয়ার এমন দাবি মেনে নেবে না।
“তিনি (পুতিন) এটা চান। আমরা এমনটা হতে দেবো না,” বলেছেন তিনি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি ইউরোপকে নিজ মহাদেশের নিরাপত্তা ও শান্তির দায়িত্ব নিয়ে প্রভাবশালী বিশ্ব নেতা হয়ে ওঠারও তাগাদা দেন।
ওয়াশিংটনের ওপর ইউরোপের প্রভাব কম আর মিত্ররা নিরাপত্তা খরচ করতে চায় না, ওয়াশিংটন এমনটা মনে করে বলেও মত তার।
“ইউরোপ একদিন আমাদের ছেড়ে যাবে, আমাদের মিত্র থাকবে না- এমনটা কি যুক্তরাষ্ট্রের কেউ ভাবে কখনো? উত্তর হল না,” বলেন জেলেনস্কি।
ইউরোপিয়ানদের ঐক্যবদ্ধ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতি থাকা দরকার মন্তব্য করে অভিষেকে দেওয়া ভাষণে নেটো বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের প্রশংসাও করেন তিনি।
ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে নেটো সদস্যদেরকে তাদের প্রতিরক্ষায় জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।
“যদি প্রতিরক্ষায় জিডিপির ৫ শতাংশ লাগে, লাগুক। ওষুধ বা পেনশনের জন্য প্রতিরক্ষায় খরচ কমাতে হবে, মানুষের এমন আবেগ নিয়ে খেলার কোনো দরকার নেই। এটা ন্যায্য নয়,” বলেছেন জেলেনস্কি।