নাভারো নানাভাবে ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, প্রভাবশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ’ফাইভ আইজ’ থেকে কানাডাকে বের করে দিয়ে তাদেরকে আরও চাপে ফেলা উচিত।
Published : 26 Feb 2025, 01:11 AM
গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানে পাঁচ দেশের প্রভাবশালী জোট ‘ফাই-আইজ’ থেকে কানাডাকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন হোয়াইট হাউজের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা।
কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোসহ ডনাল্ড ট্রাম্পের নানা ‘হুমকি-ধমকির’ মধ্যে এমন পদক্ষেপ নিতে তোড়জোড় করছেন পিটার নাভারো, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘কাছের উপদেষ্টা’ হিসেবে পরিচিত।
নাভারোর এমন ‘প্রচেষ্টার’ বিষযে অবহিত ট্রাম্প প্রশাসনের এমন ব্যক্তিদের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এ খবর প্রকাশ করেছে।
তার এ ‘আইডিয়া’ ট্রাম্পের মনে ধরেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা আছে।
কানাডা দখলে নেওয়ার ইচ্ছাপোষণ করা ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, আগামী ৪ মার্চের পর কানাডা থেকে পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ও মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে কানাডা ‘যথার্থ’ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ নিয়ে দেশটির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প।
এরপর দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, কানাডা দখল করে নেওয়ার যে ইচ্ছার কথা ট্রাম্প বলে আসছেন, তা শুধু ‘কথার কথা নয়’।
দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে কানাডাকে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ’ফাইভ-আইজ’ থেকে বিদায় করে দিতে নাভারোর চেষ্টার খবর সামনে এল।
ফাইভ-আইজের সদস্য রাষ্ট্র পাঁচটি। এ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, ‘ফাইভ আইজ’ থেকে কানাডাকে বহিষ্কারের বিষয়ে বক্তব্য নিতে তারা নাভারো ও হোয়াইট হাউজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু কেউই সাড়া দেয়নি। মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ট্রুডোর কার্যালয়ও।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে নাভারো সহজেই ওভাল অফিসে যেতে পারেন। তিনি নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ফাইভ-আইজ থেকে কানাডাকে বের করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ওপর চাপ বাড়ানো উচিত।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নাভারো ছিলেন হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টার দায়িত্বে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে হামলার তদন্তে কংগ্রেসনাল কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় গত বছর কয়েক মাস জেল খেটেছেন তিনি।
তার বাণিজ্যনীতি ট্রাম্পের মতই, যিনি মাঝে মাঝে তাকে ‘মাই পিটার’ বলে ডাকেন। গত ডিসেম্বরে নাভারোকে বাণিজ্য ও উৎপাদনবিষয়ক সিনিয়র কাউন্সেলর হিসেবে মনোনয়ন দেন।
বিশ্বে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রধানের সবচেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে ‘ফাইভ আইজের‘। নেটওয়ার্কের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে অত্যন্ত সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদানের পাশাপাশি নানা অভিযানেরও সমন্বয় করে থাকে।
মধ্য অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত সিআইএ-নেতৃত্বাধীন ’পাইন গ্যাপ স্যাটেলাইট’ স্টেশনকে এ নেটওয়ার্কের সদস্যদের ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেটি চীন সম্পর্কে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে।
কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা- সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা ডেনিস উইল্ডার মনে করেন, “বিশ্ব ইতিহাসে ফাইভ আইজ এখন পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রধানের সবচেয়ে সফল নেটওয়ার্ক।“
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির ‘গোপন যোগাযোগ’ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ‘কোড ব্রেকারদের’ একসঙ্গে কাজ করার মধ্য দিয়ে এই নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু হয়। এর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয় ১৯৫৬ সালে।
উইল্ডার মনে করেন, “কয়েক দশকের এই বোঝাপড়ায় কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটলে তা মস্কো, বেইজিং, তেহরান ও পিয়ংইয়ংয়ের মত বিরোধীপক্ষের আনন্দের উপলক্ষ হয়ে উঠতে পারে।”
এ নেটওয়ার্কে সবচেয়ে কম গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে কানাডা ও নিউ জিল্যান্ড। এরপরও কোনো সদস্যকে বের করে দেওয়া হলে নেটওয়ার্কের অন্য সদস্যরা সেটির সমালোচনা করতে পারে। সমালোচনা আসতে পারে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের থেকেও।
ফাইভ আইজের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, কানাডাকে নেটওয়ার্ক থেকে বের করে দেওয়ার পরিণতি হতে পারে খুবই ভয়াবহ।
“নিজেদের জায়গায় বসে থেকে নিজেদের দিকে আসা হুমকির দিকে নজর রাখার জন্য আমাদের সব সহযোগীকেই পাশে প্রয়োজন।”
২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়ে ভূমিকা রাখা হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন ‘স্ট্র্যাটেজিস্ট’ স্টিভ ব্যানন বলেন, “কানাডার বুঝতে হবে, ট্রাম্প কিন্তু ট্রুডোকে এমনি এমনি ‘ট্রল’ করছেন না। তিনি দেশটিকে দখলে নেওয়ার ব্যাপারে ‘সিরিয়াস’।