বিজ্ঞাপন আর ট্র্যাকারমুক্ত সার্চ ইঞ্জিন আনলেন সাবেক গুগলার

আমাদের মনে হচ্ছিল প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপনদাতার গুরুত্বই বেশি - ব্যবহারকারীদের সেবা দেওয়া নয়।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 10:05 AM
Updated : 6 Oct 2022, 10:05 AM

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স আর জার্মানির প্রযুক্তি বাজারে একযোগে অভিষেক হয়েছে বিজ্ঞাপন আর ট্র্যাকারবিহীন সার্চ ইঞ্জিন ‘নিভা’র।

নতুন এই সার্চ ইঞ্জিনটির নির্মাতা শ্রীধার রামাসোয়ামি গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবসার প্রধান ছিলেন টানা ১৬ বছর। কিন্তু, প্রযুক্তি খাত মানুষের ব্যক্তিগত ডেটা অপব্যবহার করছে এবং তিনি নিজে আর তার অংশ হতে চান না বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন সাবেক এই গুগলার।

মূলত বিজ্ঞাপনের খাতিরেই ব্যবহারকারীর অনলাইন কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখে সার্চ ইঞ্জিনের ট্র্যাকার।

নিভার মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে রামাসোয়ামি বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছিল প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে বিজ্ঞাপন এবং বিজ্ঞাপনদাতার গুরুত্বই বেশি - ব্যবহারকারীদের সেবা দেওয়া নয়।”

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিভার অভিষেক হয়েছে গেল বছরেই; এরই মধ্যে দেশটিতে সার্চ ইঞ্জিনটির নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ছয় লাখ। বিবিসি জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাত কোটি ৭৫ লাখ ডলারের তহবিল পেয়েছে প্ল্যাটফর্মটি।

এ সার্চ ইঞ্জিনটিতে বিনা খরচে সার্চ সেবা পান ব্যবহারকারী; পয়সা খরচ করে সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান কিনলে ভিপিএন এবং পাসওয়ার্ড-ম্যানেজার সেবাও দেয় এটি।

সার্চ ইঞ্জিনটি ব্যবহারের জন্য আগ্রহী ব্যক্তির প্রথমেই লাগবে একটি অ্যাকাউন্ট। পরে নিজের প্রয়োজন মতো তাদের সাবস্ক্রিপশন কেনার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সার্চ ইঞ্জিনের বাজারের সিংহাসন দীর্ঘ দিন ধরে দখলে রাখা গুগলের বিষয়ে রামাসোয়ামির মত, “বাজারে আধিপত্যবিস্তারী অবস্থানে আছে গুগল- সত্যিই উদ্ভাবনী এবং নতুন কোনো অভিজ্ঞতা সৃষ্টির প্রয়োজন আসলে তাদের নেই।”

“আর কোম্পানি হিসেবে শেয়ারমালিকদের আয় ও মুনাফা ক্রমাগত বাড়ছে দেখানোর বাধ্যবাধকতাও অনুভব করে তারা। তাই তারা বিজ্ঞাপনের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।”

‘নিভা’ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা কেমন?

বিবিসি জানিয়েছে, ইংরেজিতে ‘মাইগ্রেইন’ শব্দটি সার্চ করলে প্রথম পেইজে প্রায় একই ফলাফল আসে গুগল ও নিভায়; এর সিংহভাগই সংবাদ প্রতিবেদন আর যাচাইকৃত তথ্যের লিংক।

কিন্তু, পার্থক্য নজরে আসে কোনো বহুল পরিচিত ব্র্যান্ডের নাম লিখে সার্চ করলে।

উভয় সার্চ ইঞ্জিনেই ‘বিএমডব্লিউ’ লিখে সার্চ করলে প্রথমে গাড়ি নির্মাতার ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া পেইজের লিংক আসে ফলাফলের তালিকায়।

গুগলের ফলাফলে তারপরেই ছিল বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া ফিড এবং পুরনো গাড়ি বিক্রেতার আধিপত্য। কিন্তু, বিএমডব্লিউয়ের নিজস্ব ওয়েব পেইজের মধ্যেই সার্চের ফলাফল সীমাবদ্ধ রেখেছিল নিভা।

বিবিসি জানিয়েছে, ফলাফলে বৈচিত্র্য বেশি থাকলেও গুগল যে ব্যবহারকারীকে গাড়ি কিনতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছিল, সে বিষয়টি ছিল পরিষ্কার।

অন্যদিকে, নিভার ক্রোম ব্রাউজার এক্সটেনশন ওয়েব পেইজে যাওয়ার পর সেগুলো যে ট্র্যাকার ইনস্টল করে দেয় তার তালিকা বানিয়ে রাখে।

বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ৩৫১টি ট্র্যাকার ইনস্টল করে দেয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের ওয়েবপেইজ। বিবিসির ওয়েবপেইজ ইনস্টল করে চারটি। পরিচিতি এমন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবপেইজের ইনস্টল করে দেওয়া ট্র্যাকার বিবেচনায় নিয়েছে বিবিসি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন বলছে, বিবিসি বাদে বাকি সবগুলো ওয়েবপেইজ থেকে ইনস্টল করে দেওয়া ট্র্যাকারের মধ্যে অন্তত একটি গুগলের ছিল। অর্থাৎ, গোপনে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে গুগল।

তবে, প্রযুক্তি বাজারের বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিযোগীরা চেষ্টা করেও সার্চ ইঞ্জিনের সিংহাসন থেকে সরাতে পারেনি গুগলকে। চেষ্টা করেও সাফল্য পায়নি ‘বিং’ ও ‘ডাকডাকগো’র মতো সেবাগুলো।

এ পরিস্থিতিতে রামাসোয়ামির সার্চ ইঞ্জিন আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিবিসির সংবাদকর্মীরা। উত্তরে বাজার বিশ্লেষক স্টেফ লিউ বলেছেন, “বাস্তবসম্মতভাবে, না।”

“এটা কার্যত ডেভিড বনাম গোলায়াথের গল্প। গুগলের ব্যবহারকারী প্রচুর, এর আয়ও অনেক বেশি।”

“এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্যই হচ্ছে গোপনতা নিয়ে শঙ্কিত ব্যবহারকারীদের বিকল্প কিছু দেওয়া; যারা চান না যে গুগল সবসময় তাদের ডেটা সংগ্রহ করুক এবং সার্চে হিস্ট্রি দেখে বিজ্ঞাপন দেখাক,”-- যোগ করেন তিনি।