এআই বৈঠকে চীন থাকলেও ‘স্বীকৃতি মেলেনি’ যুক্তরাজ্যের

যুক্তরাজ্য শুধু তার সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছানো দেশগুলোকে সম্মুখসারিতে রাখতে চেয়েছিল, যেখানে বৃহস্পতিবারের এক যৌথ প্রস্তাবনায় সমর্থন দেয়নি চীন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2023, 10:36 AM
Updated : 5 Nov 2023, 10:36 AM

যুক্তরাজ্যে আয়োজিত এআই সম্মেলনে  চীন বিভিন্ন দেশের শীর্ষ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা বললেও দেশটিকে ‘সমমনা’ অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় রাখেনি আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া, বৈঠকের অফিসিয়াল হ্যান্ডশেক বা গ্রুপ ছবিতেও দেখা যায়নি চীনকে।

চীনের এমন অনুপস্থিতি নিয়ে অনেক প্রশ্নই উঠে এসেছে কারণ দুই দিনের এই সম্মেলনের প্রথম দিন অংশ নিয়েছিল দেশটি, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার বিষয়ে আলোচনে করা হয়। আয়োজনের দ্বিতীয় দিন বিভিন্ন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকে বেইজিং অংশ নিয়েছে কি না, সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি যুক্তরাজ্য।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে চীনের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের উপমন্ত্রী উয়ু ঝাওহুই। শুক্রবার তার মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করার আগে চীনের বৈঠকে অংশ নেওয়ার খবরটিও প্রকাশ পায়নি।

“বৈঠকের সুনির্দিষ্ট বিষয়াদি ও ফলাফল সম্পর্কে জানতে দয়া করে আয়োজক যুক্তরাজ্যের সরকারি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” --উয়ুকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের ছবিতে কেন দেখানো হয়নি, এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছে চীনা মন্ত্রণালয়।

চীনের উপস্থিতি প্রচার না করার একটি কারণ হতে পারে, বুধবার যুক্তরাজ্যের উপ প্রধান মন্ত্রী অলিভার ডাউডেন ‘ব্লুমবার্গ টিভি’কে বলেন, “বৈঠকে এমন কিছু সেশন রয়েছে, যেখানে আমাদের সমমনা দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে কথা বলতে পারে। তাই, এতে সম্ভবত চীনের যোগ দেওয়া যথাযথ হতো না।”

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আরেকটি কারণ হতে পারে যুক্তরাজ্য শুধু তাদের সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছানো দেশগুলোকে সম্মুখসারিতে রাখতে চেয়েছিল, যেখানে বৃহস্পতিবারের এক যৌথ প্রস্তাবনায় সমর্থন দেয়নি চীন।

এআই মডেল পরীক্ষা করার ওই প্রস্তাবনায় চীন কেন সমর্থন দেয়নি, সে সম্পর্কে রয়টার্সকে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি চীনা প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

এ ক্ষেত্রে কুটনৈতিক প্রোটোকলের ভূমিকাও থাকতে পারে কারণ দক্ষিণ ইংল্যান্ডের ব্লেচলি পার্কে আয়োজিত সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অংশ নেওয়া অন্যান্য প্রতিনিধিদের সবাই ছিলেন জ্যেষ্ঠ পদমর্যাদার।

বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, যেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন’সহ বিশ্বের বিভিন্ন সমমনা দেশের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা।

যুক্তরাজ্যে আয়োজিত প্রথম এআই সম্মেলনে চীনের অংশগ্রহণকে সমালোচনা করেছেন কয়েকজন ব্রিটিশ এমপি। তাদের প্রশ্ন ছিল, বেইজিং পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রযুক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বী ও সামরিক হুমকি হিসেবে দেখে কি না, সে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা উচিৎ ছিল।

বুধবার সম্মেলনের প্রথম দিনেই যোগ দিয়েছিলেন উয়ু, যেখানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরও ২৬টি দেশ এআই প্রযুক্তির সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবেলা করার পাশাপাশি সেগুলো কমিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়। আর এ ঘোষণাকে ডাকা হচ্ছে ‘ব্লেচলি ডিক্লেরেশন’ নামে।

এআই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে জনসমক্ষে উয়ু’র উপস্থিতি না থাকা নিয়ে এক সংবাদকর্মী সুনাককে জিজ্ঞেস করেন, চীনকে কেন সম্মেলনের শেষ দিনে যুক্ত করা হয়নি।

সুনাক এ বিষয়ে সরাসরি জবাব না দিলেও বলেছেন, তিনি এ সম্মেলন থেকে যে ফলাফল অর্জন করতে চেয়েছেন, চীনের এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে সেটা তিনি পেয়েছেন।

এআই সম্মেলনে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট দেশের অংশ নেওয়ার বিষয়ে রয়টার্সকে মন্তব্য করতে রাজি হননি ব্রিটিশ সরকারের মুখপাত্র।

সুনাক সংবাদ কর্মীদের বলেন, “কেউ বলেছে, চীনকে আমন্ত্রণ জানানোরই দরকার নেই। আবার অন্যরা বলেছে, আমরা কখনওই তাদের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব না।”  

“দুই পক্ষই ভুল ছিল।”