আরেকটি রুদ্ধশ্বাস মাদ্রিদ ডার্বি, রেয়ালকে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে আতলেতিকো

৬ গোলের লড়াইয়ে জিতল আতলেতিকো মাদ্রিদ, কোপা দেল রের শিরোপাধারীদের পথচলা থেমে গেল শেষ ষোলোতে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2024, 11:14 PM
Updated : 18 Jan 2024, 11:14 PM

আট দিন আগে মাদ্রিদ ডার্বিতে যেমন উত্তেজনা-উত্তাপ ছড়িয়েছিল, সেটির পুনরাবৃত্তি হলো যেন আবার। দুইবার পিছিয়ে পড়ে দুবারই সমতা টেনে ফের ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে টেনে নিল রেয়াল মাদ্রিদ। তবে এবার আর সেখানে পারল না তারা। কার্লো আনচেলত্তির দলের অপরাজেয় যাত্রা থামিয়ে কোপা দেল রের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল আতলেতিকো মাদ্রিদ।

ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় বৃহস্পতিবার রাতে স্পেনের দ্বিতীয় সেরা প্রতিযোগিতাটির শেষ ষোলোয় ৬ গোলের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ৪-২ ব্যবধানে জিতেছে দিয়েগো সিমেওনের দল। নির্ধারিত সময়ে ২-২ সমতা ছিল।

সামুয়েল দিয়াস লিনোর গোলে আতলেতিকো এগিয়ে যাওয়ার পর তাদের গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাকের আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফেরে রেয়াল। আলভারো মোরাতা স্বাগতিকদের ফের লিড এনে দেওয়ার পর সমতা টানেন হোসেলু। অতিরিক্ত সময়ে অঁতোয়ান গ্রিজমান চমৎকার গোলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান রদ্রিগো রিকেলমে।

চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এর আগে একটি ম্যাচই শুধু হেরেছিল রেয়াল, গত সেপ্টেম্বরে লা লিগায় আতলেতিকোর মাঠে। সেই মেত্রোপলিতানোয় ফিরে আরেকটি হারের স্বাদ পেল আনচেলত্তির দল। ছেদ পড়ল তাদের ২১ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রায়। কোপা দেল রের শিরোপাধারীদের পথচলা থেমে গেল শেষ ষোলোতেই।

গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রিয়াদে স্প্যানিশ সুপার কাপে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো সেমি-ফাইনালে আতলেতিকোকে ৫-৩ গোলে হারিয়েছিল রেয়াল। পরে ফাইনালে বার্সেলোনাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে তারা পায় ট্রফির স্বাদ। এরপর প্রথমবার মাঠে নেমেই এই হার।

এই মৌসুমে ঘরের মাঠে নিজেদের অপরাজেয় যাত্রা অব্যাহত রাখল আতলেতিকো। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এখানে ১৪ ম্যাচের ১৩টি জিতল তারা, অন্যটি ড্র।

প্রথম কয়েক মিনিটে দুই দলই মাঝমাঠে পজেশন ধরে রেখে খেলার চেষ্টা করে। দ্বাদশ মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় রেয়াল। লুকা মদ্রিচের ক্রস পেয়ে বক্সে প্রতিপক্ষের দুই জনের বাধা এড়িয়ে বাঁ পায়ে জোরাল শট নেন জুড বেলিংহ্যাম, বল আতলেতিকোর আক্সেল উইটসেলের পা ছুঁয়ে ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল উড়িয়ে মেরে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন অরক্ষিত ভিনিসিউস জুনিয়র।

২০তম মিনিটে দুর্দান্ত ডাবল সেভে জাল অক্ষত রাখেন ওবলাক। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে রদ্রিগোর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকানোর পর কাছ থেকে ভিনিসিউসের প্রচেষ্টাও রুখে দেন তিনি।

মাঝে কিছু হাফ-চান্স নষ্ট করা আতলেতিকো ৩৯তম মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগেই এগিয়ে যায়। রদ্রিগো দে পলের ক্রসে গ্রিজমানের মাথা ছুঁয়ে আসা বল হেডে ক্লিয়ার করার চেষ্টায় উল্টো নিজেদের দিকে ঠেলে দেন রেয়ালের ডিফেন্ডার আন্টোনিও রুডিগার। আর দূরের পোস্টে হাফ ভলিতে গোলটি করেন লিনো।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে নিজেদের ভুলে গোল হজম করে আতলেতিকো, সমতার স্বস্তি ফেরে রেয়াল শিবিরে। মদ্রিচের ফ্রি-কিক এগিয়ে এসে কয়েক জনের মাথার ওপরে হাত বাড়িয়ে পাঞ্চ করতে যান ওবলাক, বল তার হাতের ওপরের দিকে লেগে নিজেদের জালেই জড়ায়, আত্মঘাতী গোল!

বিরতির পর বেশিক্ষণ থাকেনি রেয়ালের সেই স্বস্তি। এবার নিজেদের ভুলে গোল হজম করে তারাও। ৫৮তম মিনিটে আতলেতিকোর একজনের শট এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার পায়ে লেগে বল যায় রেয়ালের বক্সে। গোলরক্ষক আন্দ্রি লুনিন এগিয়ে এসে শুয়ে পড়ে হাত বাড়িয়ে বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রুডিগায়ের পায়ে লেগে বল যায় রেয়ালের জালের দিকে, অরক্ষিত মোরাতা ফাঁকা জালে বল পাঠাতে ভুল করেননি।

৭৫তম মিনিটে সুযোগ আসে রেয়ালের সামনে। রদ্রিগোর শট আতলেতিকোর খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে ক্রসবারে বাধা পায়। ৮০তম মিনিটে মোরাতার শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি লুনিন।

নির্ধারিত সময়ের আট মিনিট বাকি থাকতে ফের সমতায় ফেরে রেয়াল। ভিনিসিউসের পাস পেয়ে দূরের পোস্টে ক্রস বাড়ান বেলিংহ্যাম, হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন অরক্ষিত হোসেলু।

বাকি কয়েক মিনিটে আর গোল না হওয়ায় টানা অষ্টমবারের মতো রেয়াল ও আতলেতিকোর মুখোমুখি নকআউট ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

স্প্যানিশ সুপার কাপের ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে দুই গোল করে জয়োল্লাস করেছিল রেয়াল। এবার সেখানে দুই গোল করে আতলেতিকো।

প্রথমটি ১০০তম মিনিটে। সঙ্গে লেগে থাকা ভিনিসিউসকে ছিটকে ফেলে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন গ্রিজমান, এরপর বাঁ পায়ের চমৎকার শটে জালে বল পাঠান সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড।

১১১তম মিনিটে আতলেতিকোর জালে বল পাঠায় রেয়াল, তবে তার আগে বেলিংহ্যাম অফসাইডে থাকায় গোল মেলেনি।

১১৯তম মিনিটে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা রিকেলমে। মেমফিস ডিপাইয়ের পাস থেকে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ২৩ বছর বয়সী স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানো।