লিওনেল মেসির কাছে বয়স কেবলই এক সংখ্যা। নিজের শরীরটাকে তিনি বোঝেন খুব ভালো করে। তাই অন্যরা যে যাই ভাবুক, যত কথাই উঠুক না কেন, মেসির কাছে সেসবের কোনো গুরুত্ব নেই। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, সরে দাঁড়ানোর মুহূর্তটি এলে নিজেই টের পাবেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে তখন আর কালক্ষেপণ করবেন না একটুও।
মেসির ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এত কথা ওঠার সবচেয়ে বড় কারণ তার বয়স। আগামী জুনে ৩৭ বছর পূর্ণ হবে তার। ক্লাব ইন্টার মায়ামির সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে ২০২৫ সালে। বয়সের দিক থেকে বলাই যায়, ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় আছেন বিশ্বকাপ জয়ী তারকা। কিন্তু প্রচলিত ধ্যান, ধারনা যে খাটে না কারো কারো বেলায়! মেসিও সেই দলে।
সম্প্রতি এমবিসি-এর ‘বিগ টাইম পডকাস্টে’ প্রিয় ফুটবলকে বিদায় জানানোর প্রসঙ্গ উঠতে মন খুলে অনেক কথা বললেন মেসি। দার্শনিকের সুরে, কখনও গভীর জীবনবোধ নিয়ে। সেখানে সহসা থেমে যাওয়ার ছিটেফোঁটা আভাসও নেই। বরং স্পষ্ট উচ্চারণে আটবারের ব্যালন দ’র জয়ী বললেন, সময়ই বলে দেবে কখন যতিচিহ্ন টানার সময় হবে।
“সেই মুহূর্তটা কেমন হবে আমি জানি, যখন টের পাব আর পারফর্ম করতে পারছি না। বুঝতে পারব যে, নিজেকে উপভোগ করছি না, সতীর্থদের কোনো সাহায্য করতে পারছি না (তখন সিদ্ধান্ত নেব)।”
“আমি ভীষণ আত্ম-সমালোচক। আমি জানি, কখন আমি ভালো (অবস্থায় থাকি), কখন খারাপ, কখন ভালো খেলি, কখন বাজে খেলি...এবং যখন অনুভব করব পদক্ষেপটা নেওয়ার সময় এসেছে, বয়সের কথা না ভেবেই সেটা নেব। ভালো অনুভব করলে, আমি সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই, কারণ আমি এটাই পছন্দ করি এবং জানি, সেটা কিভাবে করতে হয়।”
মুঠোভরে পাওয়া কাতার বিশ্বকাপ নিয়েও কথা বলেছেন মেসি। মরুভূমির আসরে ব্যক্তিগত ও দলীয় অর্জনে প্রাপ্তির পূর্ণতায় ভেসেছিলেন তিনি। অধরা বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি জিতে নেন সেরা খেলোয়াড়ের মুকুটও।
তবে মেসি এটাও জানালেন যে, কাতার বিশ্বকাপের সময়ও তার মনের অলিন্দে উঁকি দিয়েছিল জাতীয় দলকে বিদায় বলার ভাবনা!
“কাতার বিশ্বকাপে সবকিছু যদি ঠিকঠাক না চলত, তাহলে আমি জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়াতাম।”
কাতার বিশ্বকাপের পর কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। বয়সের ছাপ মেসির খেলায়, শরীরে কিছুটা পড়েছে বৈকি, কিন্তু সে ভারে তিনি ন্যুজ নন মোটেও। বর্তমানে অবশ্য হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে দলের বাইরে আছেন। দলের মহাতারকাকে ছাড়াই এল সালভাদোর ও কোস্টা রিকার বিপক্ষের প্রীতি ম্যাচে জিতেছে আর্জেন্টিনা।
এরপরই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী কোচ লিওনেল স্কালোনি দলের অধিনায়ক মেসি ও অভিজ্ঞ প্লেমেকার আনহেল দি মারিয়াকে নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পরিস্কার করেছেন। দ্বিধাহীনভাবে বলেছেন, তার স্কোয়াডে স্রেফ এই দুজনের জায়গা পাকা; আরও কারো নয়।
সম্প্রতি ইন্টার মায়ামি কোচ জেরার্দ মার্তিনোর কণ্ঠেও শোনা যায়, বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও মেসির আগের মতোই ছুটে চলার কথা। বার্সেলোনার কোচ থাকাকালীন স্বদেশি তারকার মধ্যে যে সাফল্য ক্ষুধা দেখেছিলেন, এখনও তা আগের মতোই অটুট, বলেন মার্তিনো।
বার্সেলোনা, পিএসজি ঘুরে ইন্টার মায়ামিতে এসেও দারুণ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন মেসি। গত অগাস্টে মেজর সকার লিগের দলটির হয়ে লিগস কাপ জেতেন তিনি। তাতে সব মিলিয়ে তার শিরোপা জয়ের সংখ্যা এখন ৪৪টি। অনেকের চোখে সর্বকালের সেরা মেসি নিজেও তৃপ্ত তার মাঠের অর্জনে, মাঠের বাইরের জীবন নিয়েও।
“খেলাধুলার দিক থেকে ক্যারিয়ার সবকিছু অর্জনের, স্বপ্ন পূরণের সৌভাগ্য হয়েছে আমার। সত্যি বলতে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ও ব্যক্তিগত জীবনে, পরিবার ও বন্ধুবান্ধব মিলিয়ে এর বেশি আমি চাইতে পারতাম না। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যা দিয়েছেন, সেটা অনেক এবং আমি সবসময় তা উপভোগের চেষ্টা করি।”
বয়সের ভার পাত্তা না দিয়ে উপভোগের মন্ত্রেই ছুটতে চান মেসি। জাতীয় দলকে বিদায় বলার কথা না ভেবে এক একটি দিন ধরে এগিয়ে যেতে চান। স্পট উচ্চারণে আবারও বললেন, সময় এলেই থেমে যাবেন।
“সত্যি হচ্ছে, এটা (অবসর ভাবনা) নিয়ে আমি এখনও ভাবিনি। এরপর কী হবে, সেটা না ভেবে প্রতিটি দিন আর মুহূর্ত ধরে উপভোগের চেষ্টা করি।”
“বিষয়গুলো এখনও আমার কাছে পরিষ্কার নয়। আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যাওয়ার আশা আমার, যেটা আমি পছন্দ করি। যখন সময় আসবে, তখন নিশ্চিতভাবেই কী আমাকে পূর্ণতা এনে দেবে, কী পছন্দ করি এবং নতুন ভূমিকা কী হবে, সেটা আমি খুঁজে নিব।”