রবিনিয়ো-জামাল-জীবনের চাই শিরোপা, বাকিদের লক্ষ্য উন্নতি

প্রিমিয়ার লিগের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসে ১২ দলের অধিনায়ক জানালেন লক্ষ্য। বরাবরের মতোই বড় দলগুলোর অধিনায়কদের কণ্ঠে ফুলে উঠল শিরোপা জয় বা মুকুট ফিরে পাওয়ার প্রত্যয়। তুলনামূলক কম শক্তির দলগুলোর অধিনায়করা শোনালেন উন্নতির আশাবাদ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2022, 11:05 AM
Updated : 30 Jan 2022, 11:05 AM

রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার লিগের লোগো উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আসরের সব দলের অধিনায়ক। কোনো কোনো দলের অধিনায়ক আবার শোনালেন ঢাকায় তাদের প্রিয় খাবারের কথাও।

টানা দুই লিগের শিরোপা জেতা বসুন্ধরা কিংসের সামনে হ্যাটট্রিক মুকুট জয়ের হাতছানি। দলটির অধিনায়ক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন দি সিলভা রবিনিয়ো জানালেন মুকুট ধরে রাখার প্রত্যয়।

“এখানে (বাংলাদেশে) খেলতে পেরে আমি খুবই খুশি। কিংসে খেলতে পেরে খুশি। ব্রাজিলে থাকা পরিবার ও বন্ধুরাও খুশি। আমরা একটা কাপ (স্বাধীনতা কাপ) মিস করেছি, এটা কোনো ব্যাপার নয়। এটাই ফুটবল। কখনও জিতব, কখনও হারব। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব লিগ জয়ের।”

নতুন মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ জেতা আবাহনীর আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। রাফায়েল অগাস্তোর চোটে লিগে এবার দলটির নেতৃত্ব দিবেন নাবীব নেওয়াজ জীবন। জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড প্রতিশ্রুতি দিলেন ২০১৭-১৮ মৌসুমে হারানো লিগের মুকুট পুনরুদ্ধারের।

“আমরা লিগের জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। যদিও সহজ নয়, তবে আমরা শিরোপার জন্য খেলব এবং আশা করি শিরোপা জিতব।”

গত আসরে চতুর্থ হওয়া সাইফ স্পোর্টিং আজও পায়নি লিগ শিরোপা জয়ের স্বাদ। দলটির অধিনায়ক জামাল ভূইয়াও বঞ্চিত এ স্বাদ থেকে। না পাওয়ার বৃত্ত ভাঙতে এবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে চান তিনি।

“আমি জিতলে খুশি হই, হারটাও মেনে নিতে পারি। অবশ্যই আমরা এ বছর লিগ জয়ের চেষ্টা করব। যদিও সেটা কঠিন। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছে ৫-৭টা দল শিরোপার জন্য লড়বে। তো লিগ খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তবে আমরা লিগ জয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

গত লিগে কিংসকে যা একটু চাপে রেখেছিল শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব। ওই পথচলায় ১০ গোল করেছিলেন দলটির অধিনায়ক সলোমন কিংস। এবার দলীয়ভাবে আরও বেশি গোল করে তিনি পৌঁছুতে চান অভীষ্ঠ লক্ষে।

“ব্যক্তিগতভাবে আমি গোল করতে চাই। কিন্তু দলীয়ভাবে আমরা যত বেশি গোল করব, দলের জন্য সেটা আরও ভালো। আশা করি, আমরা ব্যক্তিগতর চেয়ে দলীয়ভাবে আরও বেশি গোল করব লিগে।”

২০০৭ সালে প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পর এখনও এই ট্রফি উঁচিয়ে ধরা হয়নি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে চলা দলটির অধিনায়ক সুলেমানে দিয়াবাতে এবারও তেমন কোনো স্বপ্ন দেখালেন না সমর্থকদের।

“আশা করি, মোহামেডানে ভালো করবে। সেরা চারে থেকে লিগ শেষ করতে চাই আমরা। লিগে অনেক ভালো দল আছে, তদের ভালো খেলোয়াড় আছে।”

পঞ্চম স্থানে থেকে গত লিগ শেষ করা চট্টগ্রাম আবাহনী অধিনায়ক কৌশিক বড়ুয়া সমর্থকদের জানালেন প্রিমিয়ার লিগ দেখার আমন্ত্রণ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের জাপানি অধিনায়ক তেতসুয়াকি মিসুয়া ঢাকায় এসে কাচ্চি বিরিয়ানির প্রতি মুগ্ধতা জানাতে গিয়ে বললেন, “আই লাইক কাচ্চি বিরিয়ানি।”

পুরান ঢাকার দল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটি গত লিগে হয়েছিল অষ্টম। তবে সবশেষ ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলেছে তারা। এটা যে ‘আলৌকিক’ কিছু নয়, লিগে তা প্রমাণে দল মরিয়া থাকবে বলে জানালেন অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান কিরণ। মজা করলেন পুরান ঢাকার খাওয়া-দাওয়া নিয়েও।

“সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ। আমরা কঠোর পরিশ্রম দিয়ে প্রমাণ করতে চাই (ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলা) এটা মিরাকল নয়। পুরান ঢাকার খাবারের লোভ…শুধু বিরিয়ানি খাওয়ার কারণে পেট বেড়ে গিয়েছিল। এগুলো তো ক্লাব করে না, আমরা ব্যক্তিগতভাবে করি। তো ব্যক্তিগতভাবে আমরা চাইলেই এই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এখন করছি।”

লিগের খেলোয়াড়দের খাদ্যাভাস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা টেনে আনলেন জাতীয় দলের ‘ছুটিতে’ থাকা কোচ জেমি ডেকে। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের অধিনায়ক প্রসংশায় ভাসালেন ইংলিশ কোচের।

“আসলে জেমি আসার পর থেকে আমাদের কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমাদের বাঙালি প্লেয়ারদের খাবারের প্রতি দুর্বলতা আছে। ওর মাধ্যমে শিখেছি আমরা কিভাবে ফিটনেস ভালো রাখতে পারব…ওর সময় থেকে আমাদের ফিটনেসের উন্নতি হয়েছে। এটা শুধু জাতীয় দলের নয়, ক্লাব ফুটবলারদেরও।”

গত লিগে পুলিশ এফসি হয়েছিল নবম; কোনোমতে অবনমন এড়িয়েছিল উত্তর বারিধারা। এবারই লিগে প্রথম খেলবে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ। এই তিন দলের অধিনায়কের চাওয়া উন্নতি করা কিংবা লড়াকু ফুটবল উপহার দেওয়া।

পুলিশ এফসির অধিনায়ক ব্রাজিলিয়ান দানিলো অগাস্তো বললেন, “বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে খেলতে পেরে আমি খুশি। বাফুফেকে ধন্যবাদ এই লিগ আয়োজনের জন্য। আমরা চেষ্টা করব ভালো করার, লড়াই করার।”

উত্তর বারিধারা অধিনায়ক মোহাম্মদ জুয়েল জানালেন উন্নতির আশাবাদ।

“আমাদের তেমন কোনো প্রেসার নেই। গতবার আমরা অনবমন এড়িয়ে ভালো পর্যায়ে আছি। এবার লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলে ৬-৭ এ থাকার।”

প্রথমবারের মতো লিগে খেলা স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের অধিনায়ক সজল ইসলাম জানালেন নির্ভার থেকে লড়াকু ফুটবল খেলার লক্ষ্য।

“আমি তেমন কোনো চাপ নিচ্ছি না। প্রতিপক্ষ যেই হোক খেলতে হবে। এটাই আমাদের মানসিকতা।”