ফিরেই নায়ক ডে ব্রুইনে, শেষ ষোলোয় বেলজিয়াম

মাত্র তিন দিন আগে অনুশীলনে ফেরা কেভিন ডে ব্রুইনের খেলাই নিশ্চিত ছিল না। সেখানে সব অনিশ্চয়তা দূরে ঠেলে বিরতির পর মাঠে নেমেই খেলার চিত্র বদলে দিলেন তিনি। কোণঠাসা দলকে পথে ফেরাতে সতীর্থের গোলে রাখলেন অবদান, পরে নিজে করলেন দুর্দান্ত একটি গোল। ডেনমার্কের বিপক্ষে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে দারুণ এক জয় তুলে নিল বেলজিয়াম।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2021, 05:58 PM
Updated : 17 June 2021, 06:59 PM

কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে বেলজিয়াম। টানা দুই জয়ে ইতালির পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ষোলোয় উঠল তারা।

আগের ম্যাচে ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনের মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া, সতীর্থকে হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই মাঠে নামতে বাধ্য হওয়া এবং ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে সেদিন হেরে টুর্নামেন্টে ডেনমার্কের শুরুটা হয় ভীষণ হতাশাজনক। তা ঝেড়ে ফেলে এদিন দাপুটে শুরু করে তারা।

বল দখলে একটু পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণে পুরো ম্যাচে আধিপত্য করে তারা। অনেক সুযোগও পায়; কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। তাদের ২১ শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে প্রথমার্ধে লক্ষ্যে একটিও শট নিতে না পারা বেলজিয়াম বিরতির লক্ষ্যে চারটি শট নিয়ে পার্থক্য গড়ে দেয়।

ম্যাচের শুরুতেই অনেক বড় ভুল করে ফেলেন জেসন দেনায়ের। বিপজ্জনক জায়গায় পাস দিয়ে বসেন প্রতিপক্ষের পিয়ের-এমিলে হোয়বিয়ের্গকে। ডেনিশ এই মিডফিল্ডার বল ধরে দ্রুত এগিয়ে পাস দেন পোলসেনকে। প্রথম ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ফাঁকে ডি-বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে দলকে এগিয়ে নেন লাইপজিগের এই ফরোয়ার্ড।

পোলসেনের ৯৯ সেকেন্ডের এই গোল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম। সবচেয়ে দ্রুততম গোলটি ৬৫ সেকেন্ডে; ২০০৪ আসরে গ্রিসের বিপক্ষে করেছিলেন রাশিয়ার দিমিত্রি কিরিচেনকো।

তিন মিনিট পর আবারও গোল খেতে বসেছিল বেলজিয়াম। তবে এবার ডি-বক্সে ঢুকে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে বসেন জোয়াকিম।

ম্যাচের ঘড়ির কাঁটা ১০ মিনিট ছোঁয়ার পর এরিকসেনের সম্মান ও সমর্থনে গ্যালারিতে উপস্থিত সব দর্শক একসঙ্গে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকে। রেফারি তখন খেলা থামিয়ে দেন, দু’দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগ দেন তারাও।

গত শনিবার এই মাঠেই ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে কার্ডিয়াক অ্যারস্টে মাঠে লুটিয়ে পড়েন এরিকসেন। মাঠে দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেদিন সবাই তাকে হারানোর ভয়ে কাঁদছিল, আজ তাদের মনে প্রিয় খেলোয়াড়ের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার প্রার্থনা। ম্যাচের আগে ডেনমার্কের কোচ কাসপের হিউমান্দ বলেছিলেন, মাঠের এই শব্দ হয়তো শুনতে পাবে এরিকসেন। এখান থেকে কয়েকশ মিটার দূরের হাসপাতালেই তো চিকিৎসা চলছে তার।

প্রতিপক্ষের দারুণ উজ্জীবিত পারফরম্যান্সের জবাবে প্রথমার্ধ জুড়ে ভীষণ ভুগতে দেখা যায় বেলজিয়ামকে। বিরতির আগে তেমন কোনো আক্রমণই করতে পারেনি তারা।

দ্বিতীয়ার্ধের নবম মিনিটে ম্যাচে প্রথমবারের মতো বেলজিয়ামকে স্বরূপে দেখা যায়। পাসিং ফুটবলে গোলও আদায় করে নেয় তারা।

রোমেলু লুকাকু ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ছোট পাস দেন ডে ব্রুইনেকে। দারুণভাবে প্রথম ছোঁয়ায় বল ধরে গোলমুখে বাড়ান চোট কাটিয়ে ফেরা এই মিডফিল্ডার। ফাঁকায় বল পেয়ে বাকি কাজ সারতে কোনো সমস্যা হয়নি তোরগান আজারের।

প্রথম ইউরোপীয় ফুটবলার হিসেবে এই নিয়ে শেষ চারটি মেজর টুর্নামেন্টে (২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপ এবং ২০১৬ ও ২০২০ ইউরো) অ্যাসিস্ট করলেন ডে ব্রুইনে।

ওই গোলে জেগে ওঠা বেলজিয়াম ৭০তম মিনিটে পায় জয়সূচক গোলের দেখা। সতীর্থের পাস পেয়ে ২০ গজ দূর থেকে জোরালো শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার ডে ব্রুইনে।

শেষ দিকে আবারও চাপ বাড়ানো ডেনমার্ক দারুণ দুটি সুযোগ পায়। ৮৪তম মিনিটে মার্টিন ব্রাথওয়েট দারুণ পজিশনে বল পেয়ে পা ছোঁয়াতেই ব্যর্থ হন। তিন মিনিট পর বাধ সাধে দুর্ভাগ্য; বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডের হেড লাগে পোস্ট ও ক্রসবারে কোনায়। 

টানা দ্বিতীয় হারের হতাশায় মাঠ ছাড়ে ডেনমার্ক। এতে তাদের পরের রাউন্ডে ওঠার পথটা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ল।

নিজেদের শেষ ম্যাচে আগামী সোমবার ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে হবে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা বেলজিয়াম। একই দিনে একই সময়ে মুখোমুখি হবে রাশিয়া ও ডেনমার্ক।