‘সাইফুলকে হত্যার পর পরিচয় গোপন করতে মুখ পুড়িয়ে দেওয়া হয়’

নেত্রকোণায় মোটরসাইকেল হাতিয়ে নেওয়ার পর চালককে হত্যার ঘটনায় আরও দুইজন গ্রেপ্তার।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2024, 05:06 PM
Updated : 18 March 2024, 05:06 PM

মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিতে চালককে হত্যার পর যাতে চেনা না যায় সেজন্য তার মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলায় মোটরসাইকেল হাতিয়ে নিতে চালক মো. সাইফুল ইসলামকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুইজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪ এর উপ-পরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

রোববার রাতে ঢাকার দক্ষিণখান থেকে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা থেকে অপরজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তিনি জানান।

গ্রেপ্তাররা হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মো. মাসুক মিয়া (২৯) এবং ঢাকা ধামরাই উপজেলার আল-ইমরান ফয়সাল (৪৪)। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের সামনের ডিঙাপোতা হাওর থেকে মুখমণ্ডল পোড়া ও গলাকাটা অবস্থায় সাইফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাশীপুর-বিশ্বাসপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ ও ছায়রা খাতুনের ছেলে। ঢাকার মিরপুরে থেকে ভাড়ায় রাইড শেয়ারিং এ মোটরসাইকেল চালাতেন তিনি।

সোমবার সকালে র‌্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গ্রেপ্তার মাসুক রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি দিনে রাজমিস্ত্রী এবং সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেন। হত্যাকাণ্ডের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আত্মগোপন করেন।

নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি ছিনতাই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানায় এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে র‌্যাবের দাবি, মাসুক ও ফয়সাল আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই চক্রের সদস্য। ১০-১৫ দিন আগে মাসুক তার ভাগ্নের জন্য একটি মোটরসাইকেল ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ফয়সালকে ২৫ হাজার টাকা দেন। মোটরসাইকেল দিতে না পারায় তাকে চাপ দিতে থাকেন মাসুক। একপর্যায়ে তারা মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

শেষে সাইফুলের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও চিত্র ধারণে নেত্রকোনায় যাওয়ার জন্য সাইফুলকে তিন হাজার টাকায় ভাড়া করেন মাসুক। বুধবার বিকাল ৩টায় ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে সাইফুলের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে নেত্রকোণার উদ্দেশে রওনা দেন মাসুক।

পথে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ফয়সাল তাদের মোটরসাইকেলে উঠেন। তারা ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে তিনজন যাত্রী বহনের কারণে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। তখন ফয়সাল নিজেকে ‘দৈনিক শেষ খবর’ পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিলে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

সন্ধ্যায় নেত্রকোণা শহরে পৌঁছে সংবাদ সংগ্রহের অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন তারা। রাত ৩টার দিকে মোহনগঞ্জের ডিঙাপোতা হাওরের দেওরাজান বালুচরে নিয়ে ফয়সাল প্রথমে পাথর দিয়ে সাইফুলের মাথায় আঘাত করেন। এতে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান সাইফুল। এ সময় ছুরি দিয়ে সাইফুলের গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, পরিচয় গোপন করতে সাইফুলের শার্ট-প্যান্ট খুলে মোটরসাইকেলের পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে দেন তারা। মোটরসাইকেলটি খালিয়াজুরীতে ভাগ্নে অন্তরের কাছে রেখে আত্মগোপনে চলে যান তারা।

ঘটনার একদিন পর সাইফুলের বড় ভাই মো. সিফাত উল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন।

মামলার পরপর খালিয়াজুরী উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সালেক মিয়ার ছেলে অন্তর আহমেদ শান্তকে (২১) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

আরও পড়ুন:

Also Read: নেত্রকোণায় মুখ পুড়িয়ে দেওয়া লাশের পরিচয় মিলেছে

Also Read: গলাকেটে হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুখ

Also Read: মুখ পুড়িয়ে দেওয়া লাশ: ‘মোটরসাইকেল হাতিয়ে নিতে হত্যা’