বরিশালে ইউপি সদস্যের ‘ইয়াবার হাট’, স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার

ওসি জানান, শুধু পুলিশ নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা সব বাহিনীর তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি ওই ইউপি সদস্য। 

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2023, 05:47 PM
Updated : 13 Oct 2023, 05:47 PM

বরিশাল নগরীর উপকণ্ঠ চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য ‘ইয়াবার হাট’ পরিচালনা করেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর লামছড়ি এলাকার বাড়ি থেকে স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার হন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাসেল হাওলাদার (৩৯)।

এ সময় তার ঘর থেকে দুই হাজার ৪৯০টি ইয়াবা, মাদক বিক্রির এক লাখ তিন হাজার ২০০ টাকা, দেশীয় পাঁচটি অস্ত্র জব্দ করা হয় বলে জানান কাউনিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান।

ওসি বলেন, “রাসেলের বিরুদ্ধে ১৮টি মাদক মামলা রয়েছে। শুধু থানা পুলিশ নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীর তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি রাসেল।

ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রাসেল তার বাড়িসহ গাজীর খেয়াঘাট এলাকায় প্রতিদিন ইয়াবার হাট বসান এবং কেউ এর প্রতিবাদ করলে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, হামলাসহ নানা বিপদে ফেলেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

উত্তর লামছড়ির এক বৃদ্ধ সাংবাদিকদের বলেন, “চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চরবাড়িয়া, উত্তর লামছড়ি, দক্ষিণ লামছড়ি, রাড়ীমহল, সাপানিয়া, চর উলালঘুনী ও নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার উঠতি কিশোর, তরুণসহ বিভিন্ন বয়সি মাদকসেবীদের নানা কৌশলে নিজের কব্জায় নেন রাসেল।

“ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের সিংহভাগ তার ইশারায় চলেন। মাদকসেবীদের ব্যবহার করে ইয়াবা বিক্রয় ও পাচারে ব্যবহার করেন।”

বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, “ইউপি সদস্য রাসেল ও তার পরিবার ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। ‘ইয়াবা বিক্রির হাট’ পরিচালনা করেন তিনি।

জনপ্রতিনিধি হয়েও মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় রাসেলের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “মাদকের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

রাসেলের বিরুদ্ধে কাউনিয়া ও কোতোয়ালি মডেল থানায় মোট ২৩টি মামলা আছে। এর মধ্যে ১৮টি মাদক ও পাঁচটি অপহরণ, মারধর ও অঙ্গহানির মামলা বলে জানান কাউনিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান।

তিনি আরও বলেন, “ইয়াবা বিক্রির জন্য লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় গিয়ে বাস করেন রাসেল মেম্বার ও তার পরিবার। পারিবারিকভাবেই মাদকের কারবার করেন তারা।”

বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের হবিনগর এলাকার সাইফুল ফরাজী (৩৩) নামে এক যুবককে ৪৫টি ইয়াবাসহ আটক করা হয়।

পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল জানান, ইয়াবাগুলো রাসেল মেম্বারের; বিক্রির জন্য তাকে দিয়েছেন। তারপর রাসেল ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে রাসেল বিপুল ইয়াবা মজুত করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সাইফুল।

মাদক ও অস্ত্র জব্দের ঘটনায় রাসেলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি আসাদুজ্জামান।

রাসেলের বিষয়ে চরবাড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন সুরুজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইয়াবা ব্যবসা করলে তো মামলা হবেই। ইউপি সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের।”

“তারা (মন্ত্রণালয়) ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কী করার আছে,” বলেন চেয়ারম্যান মাহতাব।