কায়সার আহমেদ রাজুর সমর্থকদের অভিযোগ, ফল ঘোষণার পরপরই আজিজুর রহমান তার লোকজন নিয়ে হামলা চালান।
Published : 09 Mar 2024, 09:28 PM
নারায়ণগঞ্জের একটি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য পদে ভোটের পর সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে এক যুবকের প্রাণ গেছে।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের একটি ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোহসীন জানান, ওয়ার্ড সদস্য পদে উপ নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে সংঘাতে জড়ায় দুই প্রার্থীর সমর্থকরা। তাতে একজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
নিহত মো. হৃদয় ভূঁইয়া (২৪) উপজেলার দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তার চাচাতো ভাই ওমর ফারুক ভূঁইয়াও (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উপজেলার পিরোজপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য মজিবুর রহমান গত বছরের ২০ মে মারা যান। ফলে তার পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এ পদে শনিবার উপ নির্বাচন হয়। এতে কায়সার আহমেদ রাজু ও আজিজুর রহমান নামে দুজন প্রার্থী ছিলেন।
পুলিশ জানায়, নির্বাচনের ফল ঘোষণায় আজিজুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা অগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে পরিদর্শক মোহসীনের ভাষ্য।
নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, তারা কায়সার আহমেদ রাজুর সমর্থক। ফলাফল ঘোষণার আগে কেন্দ্রের বাইরে তারা অপেক্ষা করছিলেন। ফল ঘোষণার পরপরই আজিজুর রহমান তার লোকজন নিয়ে ‘হামলা’ চালান।
তিনি বলেন, “আজিজুর ও তার লোকজন গুলি করছে, ওই গুলিতে আমার ভাই মারা গেছে। আমার বড়ভাই ইকবাল ও চাচাতো ভাই ফারুকও আহত হইছে। ফারুকের গুলি লাগছে, সে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায়।”
তবে আজিজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কায়সার আহমেদ রাজুর লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এ সময় ছোড়া গুলিতে একজন নিহত হন। আমাদের পক্ষের কেউ গুলি করার অভিযোগ মিথ্যা।”
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়।
“তার শরীরের সামনের অংশে বেশ কয়েকটি ছররা গুলির দাগ রয়েছে। আরও একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
সংঘর্ষে আহত অন্তত ১১ পুলিশ সদস্য তাদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান ওই চিকিৎসক।
যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, “সারাদিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর যখন নির্বাচন কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে উপজেলা পরিষদের দিকে যাচ্ছিলেন তখন কেন্দ্রের একপাশে দুপক্ষের সংঘর্ষে বাঁধে। এক পর্যায়ে তারা নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তা ও সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল মারতে থাকেন।”
এতে পুলিশের অন্তত ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন জানিয়ে এসপি বলেন, “সংঘর্ষের মধ্যে প্রতিপক্ষের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছে। আরও একজন গুলিবিদ্ধ বলে জেনেছি। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।”
এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
উপ নির্বাচনের ফলাফলে আজিজুর রহমানকে পিরোজপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ।