‘দুষ্টুমি করায়’ ছাত্রকে ইস্ত্রির ছ্যাঁকা, মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেপ্তার

ভুক্তভোগী ছাত্র বলে, গভীর রাতে ছ্যাঁকা দেওয়ার সময় চিৎকার করলেও সবাই ঘুমিয়ে থাকায় কেউ শুনতে পায়নি।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2024, 05:46 AM
Updated : 28 March 2024, 05:46 AM

কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় দুষ্টুমি করায় এক মাদ্রাসা ছাত্রের শরীর ইস্ত্রির ছ্যাঁকায় ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার রাতে উপজেলার চান্দের চর ইউনিয়নের নয়াকান্দি মমতাজিয়া আছমতিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে শিক্ষক আতিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে হোমনা থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন জানান।

৩৫ বছর বয়সি ওই শিক্ষক মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার শ্রীকাইল গ্রামের বাসিন্দা।

নির্যাতনের শিকার কিশোর (১৫) চান্দের চর গ্রামের এক প্রবাসীর ছেলে। সে ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার সকালে তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে মাদ্রাসার মুহতামিম, এক সহযোগী শিক্ষকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক সেখানকার আরও তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় ওই ছাত্রকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দেয়। এতে তার নিতম্ব এবং পায়ের তলা ঝলসে যায়। সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রের মা বাদী হয়ে মামলা করেন।

এদিকে, খবর পেয়ে হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা, ওসি জয়নাল আবেদীন ওই মাদ্রাসা পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শিশুটিকে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করেন তারা।

হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, “শিশুটির শরীরের ক্ষত দেখে মনে হয়েছে, ১০-১২ দিন আগেই পুড়েছে। ক্ষত স্থানে গভীর ঘাঁ হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে।”

নির্যাতনের শিকার ছাত্র সাংবাদিকদের বলে, সহপাঠীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করার সময় তার পরনের লুঙ্গি খুলে যায়। অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মাদ্রাসার মুহতামিমকে জানায়। পরে রাতে তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়।

ওই কিশোর আরও বলে, এতে তার নিতম্ব এবং পায়ের তলা ঝলসে গেছে। ছ্যাঁকা দেওয়ার সময় যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও সবাই ঘুমিয়ে থাকায় কেউ শুনতে পায়নি। শাস্তির বিষয়টি কাউকে জানালে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। পরে তাকে একটি কক্ষে একা আটকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

ছাত্রের মা বলেন, “ঘটনার দুদিন পর ছেলের জন্য খাবার নিয়া মাদ্রাসায় গেলে সে আমাকে দেখে কাঁদতে থাকে এবং বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়। ছেলের মানসিক অবস্থা দেখে তাকে বাড়ি নিয়ে আসি। পরে জখমের জায়গা দেখিয়ে সে পুরো ঘটনাটি বলে।”

ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, “শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ইস্ত্রি এবং মাদ্রাসার সিসি টিভির হার্ডডিস্ক জব্দ করা হয়েছে। পরে মাদ্রাসা কমিটিকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলেছি। বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি।”

ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষক আতিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

[প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক]